(বাঁ দিকে) শান্তনু সেন।— ফাইল চিত্র। কলকাতা পুরসভার ঘর থেকে শান্তনুর নেমপ্লেট সরানো হয়েছে (ডান দিকে)।— নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শদাতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শান্তনু সেনকে। পুরসভায় তাঁর যে ঘর ছিল, সেখান থেকে সরে গিয়েছে নেমপ্লেট। এ বিষয়ে শনিবার ‘টক টু মেয়র’-এ মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি ওই পদে শান্তনুর অস্তিত্বই অস্বীকার করেন। বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও পদে তিনি ছিলেন বলে আমার জানা নেই।’’
পুরসভার একটি ঘর শান্তনুর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। সেই ঘরের বাইরে তাঁর নাম এবং পদের নামও লেখা ছিল। শনিবার দেখা যায়, ঘরটি বন্ধ। নেমপ্লেটও খুলে ফেলা হয়েছে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে ফিরহাদকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শদাতার কোনও পদে শান্তনু ছিলেন বলে আমার জানা নেই। ওই পদে এক জনকেই চিনি। তিনি টিকে মুখোপাধ্যায়। আর কেউ ওই পদে ছিলেন না। আমি জানি না।’’
কলকাতা পুরসভায় শান্তনু সেনের সেই ঘর, যেখানে তাঁর নেমপ্লেট ছিল। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর থেকে রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালে প্রতিবাদ চলছে। কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসক এবং পড়ুয়ারা। এই আবহে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা মুখপাত্র শান্তনু। তাঁর কন্যা আরজি করেই ডাক্তারি পড়েন। ১৪ অগস্ট রাতে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় মহিলাদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতেও গিয়েছিলেন শান্তনুর স্ত্রী এবং কন্যা। ওই দিন তিনি বলেন, ‘‘আরজি কর নিয়ে কাল পর্যন্ত যা বলার বলেছি। আর কিছু বলব না। মুখপাত্র হিসাবে দলের পক্ষে কথা বলে এসেছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমার বিবেকের তাড়না রয়েছে।’’ তাঁর ওই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেহালার কর্মসূচি থেকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়েক জন বলছেন, তাঁরা মুখপাত্রের পদ ছেড়ে দিয়েছেন। জেনে রাখুন, আমরা তাঁদের আগেই সরিয়ে দিয়েছি।’’ মমতা কারও নাম করেননি। তবে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের বক্তব্য ছিল, শান্তনুর উদ্দেশেই ওই কথা বলেছেন নেত্রী।
আরজি করের ঘটনা নিয়ে আরও কথা বলেছিলেন শান্তনু। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি আরজি করের প্রাক্তনী। আমার মেয়ে সেখানে পড়ে। আরজি করে মেডিক্যাল এডুকেশন গত কয়েক বছরে রসাতলে গিয়েছে। কয়েক জনকে খুশি করতে পারলে প্রশ্ন জানা যায়। উত্তর হাতে নিয়ে হলে ঢোকা যায়, টোকাটুকি করা যায়।’’ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে শান্তনুর সম্পর্ক যে খুব একটা ভাল নয়, তা-ও অনেকেরই জানা। আরজি করের ঘটনার পর সন্দীপের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠলে শান্তনুর গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে ময়দানে নেমেছিল।
শান্তনুর স্ত্রী কাকলি সেন কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। শনিবার দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে তৈরি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে খবর। কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ‘নির্দেশে’ কাকলিকে ওই গ্রুপ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরে মেয়র ফিরহাদের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন শান্তনু-জায়া। তবে উভয়ের মধ্যে কী কথোপকথন হয়েছে, তা জানা যায়নি।