—প্রতীকী চিত্র।
দুর্গাপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা থেকে শহরের একাধিক জায়গায় শব্দবাজি ফাটানোর যে অভিযোগ উঠেছিল, তা লক্ষ্মীপুজোতেও অব্যাহত থাকল। তবে সেই মাত্রা তুলনামূলক ভাবে কম ছিল বলেই জানা গিয়েছে। তা সত্ত্বেও অবশ্য অনেক জায়গায় শব্দবাজির জেরে এক দিকে যেমন সমস্যায় পড়লেন বাড়ির বয়স্ক থেকে শিশুরা, তেমনই আতঙ্কিত ছিল বাড়ির পোষ্যেরাও। যার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।
লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন অংশ, যেমন হরিদেবপুর, বাঁশদ্রোণী, গড়িয়া, পর্ণশ্রীর পাশাপাশি বেলগাছিয়া, কাশীপুর, উল্টোডাঙা, ফুলবাগান এলাকায় শব্দবাজি ফাটানো হয়েছে বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। একাধিক বহুতল আবাসনের ভিতরেও শব্দবাজি ফাটানো হয়। তখন পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি বলেও সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি। প্রশাসনের এই ভূমিকা নিয়েই শহরের সচেতন নাগরিকদের পাশাপাশি পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন। কসবা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা অনিন্দিতা বসু বললেন, ‘‘সন্ধ্যা থেকে মাঝেমধ্যেই বাজির আওয়াজ হচ্ছে। বাড়ির পোষ্য ভয়ে এ দিক-ও দিক দৌড়োদৌড়ি শুরু করেছে।’’
প্রসঙ্গত, দিনকয়েক আগেই ইএম বাইপাসে নিষিদ্ধ শব্দবাজি-সহ এক জনকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। ভাঙড় থেকে বাজি ভর্তি ট্রাক নিয়ে শহরে ঢোকার পথে পুলিশের বিশেষ তল্লাশি অভিযানে আটক করা হয়েছিল সেই শব্দবাজি। পরিবেশ আন্দোলনে যুক্ত অনেকের যদিও দাবি, নিষিদ্ধ শব্দবাজির আটক হওয়া থেকেই বোঝা যায়, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শহরে বাজি ঢোকানোর চেষ্টা করছেন। তা হলে কেন পুলিশ পুজোর দিনগুলিতেও নজরদারির ব্যবস্থা করল না? পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘সবাই সব জানে, কিন্তু বিধি বলবৎ করার সদিচ্ছাটাই আসলে কারও নেই। সেটা থাকলে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য কোনও দিন লাগাম ছাড়ায় না। সাধারণ মানুষের সচেতনতা দরকার তো বটেই, কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন যত দিন সক্রিয় না হবে, তত দিন এই তাণ্ডব চলবে। আর আমাদের সব সহ্য করে যেতে হবে।’’
সপ্তাহ কয়েক পরেই কালীপুজো এবং ছটপুজো। এই দুই উৎসব ঘিরে প্রতি বছর সব থেকে বেশি শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ ওঠে। লক্ষ্মীপুজোতেই শব্দবাজি ফাটানো আটকানো না গেলে এই দুই উৎসবে কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তার পাশাপাশি, শব্দবাজির সর্বোচ্চ শব্দসীমা সম্প্রতি ৯০ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে। যা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন, এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূরের কথায়, ‘‘শব্দসীমার এই বৃদ্ধি আসন্ন কালীপুজোর সময়ে কী তাণ্ডব সৃষ্টি করবে, তা ভাবতেই আতঙ্ক হচ্ছে।’’
লালবাজারের যদিও দাবি, উৎসবের মরসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই নিষিদ্ধ শব্দবাজির তাণ্ডব বন্ধ করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনকি, আটকও করা হয়েছে কয়েকশো কেজি শব্দবাজি। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোতেও শহরে নজরদারি ছিল। পুলিশের বিশেষ দল টহলদারিও চালিয়েছে। প্রতিটি ডিভিশন, থানাকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’’