সল্টলেকে গরুর জন্য নাজেহাল অবস্থা স্থানীয়দের। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
রাস্তাঘাটে গরু আর ষাঁড়ের দাপটে অতিষ্ঠ সল্টলেকের বাসিন্দারা। সম্প্রতি গরুর গুঁতোয় গুরুতর জখম হয়েছেন সুব্রত দাস নামে ৮২ বছরের এক বৃদ্ধ। আপাতত ডিবি ব্লকে নিজের বাড়িতেই আছেন তিনি। সেখানে হাসপাতালের মতো পরিকাঠামো তৈরি করে তাঁকে রাখা হয়েছে। শরীরের ডান দিক নাড়াতে পারছেন না। কথা বলছেন অসংলগ্ন।
স্থানীয় কাউন্সিলর রাজেশ চিরিমারের গলায় ক্ষোভ, ‘‘গরু নিয়ে এত রাজনীতি! এখন কী করে গরু তাড়াই বলুন তো?’’ বৃদ্ধের স্ত্রী রত্না দাসের অভিযোগ, আশপাশের প্রচুর মানুষ নিয়মিত পথচলতি গরু-ষাঁড়দের খাবার দেন। সেই লোভেই ওরা আসে। কাউন্সিলরের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘আমিও তো গরুদের খাওয়াই।’’
বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘ছ’টা গরুকে রাস্তা থেকে ধরে আমাদের পুরসভার উল্টো দিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। বেশ কয়েক মাস ধরে তাদের মালিকদের দেখা নেই। পুরসভাই এখন বাধ্য হয়ে ওই গরুদের খাওয়াচ্ছে। কিন্তু অনির্দিষ্ট কাল ধরে আমরা কী করে গরুদের খাওয়াব?’’ কৃষ্ণাদেবীর মতে, ‘‘সুব্রতবাবুর ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। আলোচনা করে দেখতে হবে, কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।’’ কিন্তু, গরুদের খাওয়ানো? মেয়রের দাবি, ‘‘কেউ ব্যক্তিগত ভাবে পথচলতি গরু-কুকুরদের খাওয়ালে পুরসভার কী-ই বা করার থাকতে পারে!’’
গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাতে থলে নিয়ে দিব্যি বাড়ি থেকে বেরিয়ে হেঁটেই কাছের বাজারে যাচ্ছিলেন সুব্রতবাবু। ৭২ বছরের স্ত্রী রত্নাদেবী জানালেন, বিমানবন্দরের প্রাক্তন ওই কর্তা এই বয়সেও নিজের হাতে বাজার করতে ভালবাসেন। ওই দিন সুব্রতবাবু যখন বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই তাঁর সামনে এসে পড়ে গরুর পাল। প্রত্যক্ষদর্শীরা পরে রত্নাদেবীকে জানিয়েছেন, সেই পালের মধ্যে একটি ষাঁড়ও ছিল। আচমকা কোনও প্ররোচনা ছাড়াই সেই ষাঁড় ধেয়ে আসে অশীতিপর বৃদ্ধের দিকে। নিজের শিঙের উপরে তুলে তাঁকে ছিটকে ফেলে পিচ রাস্তার উপরে। রক্তাক্ত সুব্রতবাবু জ্ঞান হারান। আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে এসে প্রথমে তাঁকে বাড়িতে তুলে আনেন। তার পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ২১ তারিখ পর্যন্ত আইসিসিইউ-তে রাখা হয় তাঁকে।
রত্নাদেবীর কথায়, ‘‘যে মানুষ নিজে এতটা সবল ও কর্মঠ ছিলেন, তিনি বিছানা থেকে উঠতেও পারছেন না।’’ একমাত্র ছেলে কানাডায় থাকেন। বাবার দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন কলকাতায়। বৃহস্পতিবার ফিরে গিয়েছেন টরন্টোয়। একা রত্নাদেবীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।
কাউন্সিলর ও মেয়রের দাবি, সল্টলেকের কোথাও খাটাল নেই। ফলে গরু থাকার কথা নয়। তা সত্ত্বেও কী করে সল্টলেকের মতো একটি পরিচ্ছন্ন জায়গা গরু ও ষাঁড়েদের বিচরণভূমি হয়ে উঠল, সে ব্যাপারে তাঁরাও অন্ধকারে। রাজেশের কথায়, ‘‘কেষ্টপুরের দিক থেকে আসতে পারে। আমরা দেখলেই তাড়িয়ে দিই। কিন্তু, এত গরু ধরে কোথায় রাখব?’’
তিনিই জানিয়েছেন, শুধু গরু-ষাঁড় নয়, সল্টলেকে ইদানীং কুকুরের উৎপাতও বেড়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘জানেন, আমাকেও কামড়েছে! আমি হাসপাতালে গিয়ে ইঞ্জেকশন নিয়ে এসেছি!’’