গরম পড়তে না পড়তেই বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলসঙ্কট। প্রতীকী ছবি।
চৈত্রের শেষেই তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা শহরের। এ দিকে, গরম পড়তে না পড়তেই বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলসঙ্কট। উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ কলকাতায় এই সমস্যা বেশি। কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গরম পড়তেই জলের চাহিদা বেড়ে যায়। উত্তরে জলসঙ্কট তেমন না থাকলেও দক্ষিণে রয়েছে। তবে, পুরসভা একাধিক বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজে হাত দিয়েছে। ওই সমস্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আগামী এক বছরের মধ্যে পানীয় জলের সমস্যা অনেকটাই কমবে।’’
দক্ষিণের টালিগঞ্জ, যাদবপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা দিয়েছে জলসঙ্কট। গত রবিবার আমজনতার সমস্যা জানতে দক্ষিণের একাধিক ওয়ার্ডে পথে নেমেছিলেন ‘দিদির দূত’রা। তিন জন পুরপ্রতিনিধি, ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুশীলা মণ্ডল, ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের সন্দীপ দাস ও ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের গোপাল রায় ‘দিদির দূত’ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরেন। তাঁদের সামনে অধিকাংশ মানুষই পানীয় জলের সঙ্কটের কথা জানিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সন্দীপ দাস বলেন, ‘‘গরম পড়তেই আমার ওয়ার্ডের আতাবাগান, ব্রহ্মপুর, প্রগতি পার্ক, নাথপাড়া, গীতাঞ্জলি পার্ক, শান্তি সরণি ও রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, টালিগঞ্জ ও যাদবপুরের বিস্তীর্ণ অংশে জল সরবরাহ ব্যবস্থা গভীর নলকূপের উপরে নির্ভরশীল। প্রচণ্ড গরমে ওই গভীর নলকূপের বেশ কয়েকটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে। ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডের অরবিন্দনগর, আজাদগড়-সহ একাধিক কলোনি এলাকায় গরম পড়তেই পানীয় জলের হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে বেশ কিছু গভীর নলকূপ বিকল।’’
ভুগছে মধ্য কলকাতার বৌবাজার এলাকাও। সেখানকার পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে গত বছর পুরসভার মাসিক অধিবেশনে সরব হয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি বিশ্বরূপ দে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এলাকায় একটি জলের পাইপ বসানোর জন্য পুরসভার ডিজি-র (জল সরবরাহ) কাছে এক বছর ধরে দরবার করছি। কিন্তু, এখনও সেই পাইপ বসল না। গরম পড়লেই আমার ওয়ার্ডের বেশ কিছু জায়গায় জলের চাপ কমে যায়। এলাকার মানুষের কাছে আমি কী জবাব দেব?’’
পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগ সূত্রের খবর, পুরসভা রোজ তিন বার জল সরবরাহ করে। গরমে জলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পুরসভার পানীয় জলের কলে ভিড়ও বাড়ছে। বিভিন্ন বস্তি ও কলোনি এলাকায় চোখে পড়ছে জলের পাত্রের লম্বা লাইন।
ডালহৌসি এলাকার পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠক জানান, গরম পড়তেই তাঁর এলাকায় পানীয় জলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু, যথেষ্ট পরিমাণ জল পাওয়া যায় না। এ নিয়ে এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ। কিন্তু সমস্যা মেটে না।
গরম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে চিন্তায় পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকেরাও। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘খুব গরম পড়লে যে সমস্ত এলাকায় পানীয় জলের কষ্ট দেখা দেয়, সেই সমস্ত এলাকায় আমরা জলের গাড়ি পাঠিয়ে দিই। আগামী ক’দিন আমরা সেই মতো প্রস্তুত থাকব। তবে, এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিকই রয়েছে।’’