বহু হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন আরজি কর হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে প্রচুর রোগী।
রেফার হয়ে আসা প্রসূতিদের ভিড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। জল এ বার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে দেখে বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরকে জানাতে বাধ্য হয়েছেন স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসকেরা।
আর জি করে প্রধানত যারা রেফার করছে, তাদের মধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও তার অ্যানেক্স লেডি ডাফরিন, বসিরহাট মহকুমা হাসপাতাল, বারাসত জেলা হাসপাতাল, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং উত্তরপাড়া সাব ডিভিশনাল হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে, যাদের পরিকাঠামো কোনও অংশে কম নয়।
কোভিড পরিস্থিতিতে অন্য রোগের চিকিৎসা বন্ধ হতে বসায় এমনিতেই মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। খোদ স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীও বলেছেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর যতই ভিডিয়ো কনফারেন্স, ওয়েবিনার বা লিখিত নির্দেশ জারি করে পরিষেবাকে ছন্দে ফেরানোর চেষ্টা করুক, বহু প্রথম সারির হাসপাতাল শুধু রেফার করেই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত।’’
আর জি কর সূত্রের খবর, গত ১৮ অগস্ট লেডি ডাফরিন থেকে সুজাতা সাহা নামে এক সদ্য প্রসূতিকে রেফার করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, রোগিণীর রক্তচাপ বেশি ও হিমোগ্লোবিন কম ছিল। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘ওই চিকিৎসাটুকু করার ক্ষমতাও কি ডাফরিনের নেই? কলকাতা মেডিক্যাল কোভিড হাসপাতাল হওয়ার পরে সেখানকার স্ত্রীরোগ চিকিৎসকেরাই তো ডাফরিনে আছেন।’’
আর জি কর চিকিৎসা করলেও মহিলাকে বাঁচানো যায়নি। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটির প্রাথমিক মত, রেফারের টানাহেঁচড়ায় না পড়লে মহিলা হয়তো বেঁচে যেতেন। গত ২৬ অগস্ট কলকাতা মেডিক্যাল থেকে আর জি করে রেফার করা হয় নারকেলডাঙার শামিমা বেগমকে। উচ্চ রক্তচাপ ছাড়া কোনও সমস্যা ছিল না। ওই দিন আর জি করে তিনি সন্তানের জন্ম দেন। ২৬ তারিখ কলকাতা মেডিক্যাল আরও এক প্রসূতিকে রেফার করে, যিনি আর জি করে সাধারণ প্রক্রিয়ায় মা হন। ওই দিনই বসিরহাট মহকুমা হাসপাতাল এক সদ্য প্রসূতিকে নবজাতক-সহ আর জি করে পাঠায় ‘ফর বেটার ম্যানেজমেন্ট’।
আর জি করের প্রবীণ স্ত্রীরোগ চিকিৎসক শ্যামলকুমার চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কলকাতা মেডিক্যালে অনেক বেশি চিকিৎসক ও পিজিটি রয়েছেন। এইচডিইউ, নিকু, সিসিইউ— সবই আছে। তা সত্ত্বেও রেফার করছে কেন? সাগর দত্ত ও বসিরহাট হাসপাতালও এটাই করছে।’’ প্রসূতি বিভাগের প্রধান অরূপ মাঝিরও বক্তব্য, ‘‘আমরা কোনও রোগীকে ফেরাই না। কিন্তু রেফারের একটা যুক্তি থাকবে তো!’’
আর জি করের স্ত্রীরোগ বিভাগ গত কয়েক মাসের রেফার নিয়ে সমীক্ষা করে দেখেছে, জুনে তাদের বিভাগে অন্য হাসপাতাল থেকে মোট ১৫২ জন, জুলাইয়ে ১৭৬ জন ও অগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১৩২ জন
রেফার হয়েছেন। সব চেয়ে বেশি রেফার হয়েছে লেডি ডাফরিন, বসিরহাট, বারাসত, সাগর দত্ত, রেকজোয়ানি, বনগাঁ ও উত্তরপাড়া হাসপাতাল থেকে। লেডি ডাফরিন ও বসিরহাট থেকে দিনে গড়ে আট-ন’জনকে পাঠানো হয়েছে।
কলকাতা মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বললেন, ‘‘কিছু করার নেই। আমাদের কোভিড হাসপাতাল। তাই নন-কোভিড রোগীদের ডাফরিনেই পাঠাই। কিন্তু ওখানে শুধু পরিকল্পিত সিজ়ার করা হয়। অন্যদের আর জি করেই পাঠাতে হয়। কারণ, লেডি ডাফরিনে এমন আইসোলেশন ওয়ার্ড নেই যেখানে কোভিড পরীক্ষা ছাড়াই প্রসূতিকে রেখে প্রসব হতে পারে।’’
সাগর দত্তের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান কাকলি সিংহ কর্মকারের ব্যাখ্যা, ‘‘এটি কোভিড হাসপাতাল হওয়ায় স্ত্রীরোগ বিভাগের জন্য এখন মাত্র ৪৭টি শয্যা বরাদ্দ। আমরাই বা রোগীদের রাখব কোথায়?’’ বসিরহাট হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার অভিযোগ মানতে চাননি। আর বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ‘‘আমাদের এত দিন সারি ওয়ার্ড ছিল না। তাই উপসর্গযুক্ত প্রসূতিদের রেফার না করতে হত। এখন সারি ওয়ার্ড হয়েছে। আর অত রেফারের প্রয়োজন হবে না।’’