অবসরকালীন গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশন গত এক বছর ধরে পাচ্ছেন না কলকাতা পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। ফাইল ছবি।
অবসরকালীন গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশন (পেনশনের একাংশের বদলে এককালীন থোক টাকা) গত এক বছর ধরে পাচ্ছেন না কলকাতা পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০২২ সালের মে মাস থেকে এখনও পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মীরা গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশনের টাকা থেকে বঞ্চিত। পেনশন দফতর সূত্রের খবর, এখন ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে অবসর নেওয়া কর্মীদের প্রাপ্য পরিশোধ করা হচ্ছে। ২০২২-এর মে মাস থেকে এখনও পর্যন্ত পুরসভা থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় ৭০০ কর্মী। তাঁদের প্রাপ্য দিতে পুরসভার প্রয়োজন প্রায় ২২০ কোটি টাকা। পুরসভার অর্থ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ধাপে ধাপে টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। সবাই পাবেন। এ নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা পেনশনের টাকা নিয়মিত পাচ্ছেন না। ঠিকাদার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা দ্বারা নিযুক্ত পুরসভার চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতনও অনিয়মিত বলে অভিযোগ। পুরসভার বিভিন্ন উদ্যানে নিযুক্ত চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে মাস দুয়েক আগেই বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। এর পরেই পুর কমিশনার বিনোদ কুমার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, সমস্ত দফতরে বেসরকারি সংস্থা দ্বারা নিযুক্ত চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা যাতে নিয়মিত বেতন পান, সেই বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবেন বিভাগীয় প্রধানেরা। কিন্তুঅভিযোগ, তার পরেও চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের একাংশের বেতন অনিয়মিতই রয়েছে।
পুরকর্মীদের বকেয়া পাওনার দাবিতে পুরভবনে একাধিক বার আন্দোলনে শামিল হয়েছেন বিরোধী কর্মী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। কলকাতা পুরসভার ক্লার্কস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘গত দু’বছর ধরে ঠিকাদারেরা পুরসভার কাছ থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পান। সেই টাকা পুরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করার কথা। আমাদের প্রশ্ন, পুরসভা মোটা টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করছে বলে দাবি করলেও সেই টাকা কোথায় যাচ্ছে? কেন ঠিকাদারেরা বছরের পর বছর বকেয়া টাকা পাচ্ছেন না?’’ ক্লার্কস ইউনিয়নের তরফে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, অবসরকালীন বকেয়া টাকা দ্রুত না মেটালে তাঁরা বড়সড় আন্দোলনে শামিল হবেন।
পুরসভার অর্থ দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, আয়ের তুলনায় ব্যয়ের বহর বেশি হয়ে যাওয়াতেই বকেয়া পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুর কর্তৃপক্ষকে। আয়ের তুলনায় খরচের মাত্রা যে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে, তা গত পুর বাজেটেই পরিষ্কার হয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে এখনও পর্যন্ত ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দু’হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ঘাটতি মেটাতে পুর কর্তৃপক্ষ পার্কিং ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও তা প্রত্যাহার করতে হয়েছে। পুরসভার অর্থ দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিভিন্ন দফতরের আয় বাড়ানোর বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে না দেখলে আগামী দিনে পুরকোষাগারের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠবে।’’ পুরসভার রাজস্ব আদায়ের একটা বড় অংশ আসে সম্পত্তিকর বিভাগ থেকে। অথচ, সম্পত্তিকর বাবদ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে পুরসভার। ওই বকেয়া টাকা আদায়ে জোর দিতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। পুর কমিশনার কর রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।