Car Accident

driving learning: কড়াকড়িতেও কি বন্ধ হয়েছে আবাসনে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ

পরিস্থিতি বদলাতে দুর্ঘটনার পরেই আবাসনের ভিতরে সর্তকতামূলক বোর্ড টাঙিয়ে বিভিন্ন মোটর ট্রেনিং স্কুলের গাড়ি ঢোকা বন্ধ করেছেন আবাসন কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২২ ০৬:৪১
Share:

নিউ গড়িয়ার সেই আবাসন চত্বরে টাঙানো হয়েছে এই নোটিস। নিজস্ব চিত্র

নড়বড়ে হাতে, সামনের আসনে এক জনকে বসিয়ে আবাসনের ভিতরেই নতুন গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন প্রৌঢ়। আবাসনের ফাঁকা রাস্তায় চলছিল গাড়ি চালানোর ‘অনুশীলন’। চালকের আসনে বসে হাত পাকানোর সময়ে আচমকাই সামনে চলে আসে একটি মোটরবাইক। হকচকিয়ে গিয়ে ব্রেকের বদলে ওই প্রৌঢ় পা দিয়ে ফেলেছিলেন অ্যাক্সিলারেটরে! দ্রুত গতিতে গাড়িটি এগিয়ে গিয়ে সজোরে মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। এর পরে বাইকটিকে নিয়েই সামনের গাছে ধাক্কা দিয়ে থেমে যায় গাড়িটি। গুরুতর আহত হন আবাসনের বাসিন্দা, বাইকচালক সুনীলকুমার গড়াই। দ্রুত পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। এই ঘটনায় গাড়িচালক মোহনলাল ঘোষকে গ্রেফতার করেছিল পঞ্চসায়র থানার পুলিশ।

Advertisement

গত বছর ডিসেম্বরে গড়িয়া কো-অপারেটিভ আবাসনে এই দুর্ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় ছয় মাস। পরিস্থিতি বদলাতে দুর্ঘটনার মাস তিন পরেই আবাসনের ভিতরে সর্তকতামূলক বোর্ড টাঙিয়ে বিভিন্ন মোটর ট্রেনিং স্কুলের গাড়ি ঢোকা বন্ধ করেছেন আবাসন কর্তৃপক্ষ। আবাসনের ভিতরে বন্ধ করা হয়েছে বাসিন্দাদের গাড়ি চালানো শেখার প্রশিক্ষণও। এমনকি, ভিতরের রাস্তায় গাড়ির গতি কমাতে একাধিক ডিভাইভারের পাশাপাশি স্পিড ব্রেকারের ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ। প্রশিক্ষণের জন্য কোনও গাড়ি যাতে আবাসনের ভিতরে না ঢোকে, তার জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে বলে জানালেন সেখানকার সম্পাদক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সেই সময়ে প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন মোটর ট্রেনিং স্কুলের গাড়ি আসত। ওই দুর্ঘটনার পরেই আমরা বিভিন্ন মোটর ট্রেনিং স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা যাতে আবাসনের ভিতরে না ঢুকতে পারেন, তার ব্যবস্থা নিই।’’

দুর্ঘটনার পরে পঞ্চসায়রের ওই আবাসন একাধিক ব্যবস্থা নিলেও শহরের বাকি আবাসনগুলিতে কী হয়েছে? অভিযোগ বাইরের মোটর ট্রেনিং স্কুলের গাড়ি ঢুকতে দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকলেও তার ফাঁক গলেই বহু আবাসনের ভিতরে চলছে গাড়ির প্রশিক্ষণ। ই এম বাইপাস, ভি আই পি রোড, যাদবপুর, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ-সহ শহরের একাধিক আবাসনের ভিতরের রাস্তায় সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই গাড়ি চালানো শিখছেন বলে অভিযোগ। কৈখালির এক আবাসনের বাসিন্দা বলেন, ‘‘এমনিতে আমাদের আবাসনের রাস্তা অনেকটা চওড়া। কিন্তু মাঝেমধ্যেই পার্কিংয়ে জায়গা না থাকায় রাস্তার ধারে অনেকে গাড়ি রেখে দেন। ফলে সরু হয়ে যাওয়া রাস্তায় গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে কেউ আহত না হলেও গাড়িতে গাড়িতে ঠোকাঠুকির ঘটনা ঘটে প্রায়ই।’’ গড়িয়াহাটের এক আবাসনের বাসিন্দা সুব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘আগে বিকেল হলেই আবাসনের নীচে নেমে ছেলে খেলত। কিন্তু কয়েক দিন আগে ভিতরের রাস্তায় গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে পাঁচিলে ধাক্কা মারেন এক জন। কেউ আহত না হলেও তার পর থেকে ছেলেকে আর নীচে খেলতে দিতে সাহস পাই না।’’ মাস তিন আগে ই এম বাইপাসে একটি আবাসনের ভিতরে সাইকেল চালানোর সময়ে গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছিল এক কিশোর। ওই আবাসনের কমিটির অন্যতম সদস্য সোমা ঘোষ বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই আবাসনের ভিতরে গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে আমরা নির্দিষ্ট নিয়ম করে দিয়েছিলাম। গাড়ির গতিও বেঁধে দেওয়া ছিল। তবে গত কয়েক মাসে আমরা আরও সতর্ক হয়ে কড়াকড়ি করেছি।’’

Advertisement

তবে নিয়ম এবং কড়াকড়ির ফাঁক গলে যে আবাসনের ভিতরে গাড়ি শেখা চলছে না, সে কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না শহরের আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, নিয়ম ভাঙার খেসারত ফের একটি দুর্ঘটনা দিয়ে দিতে হবে না তো?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement