Dangerous Building

টানা বৃষ্টিতেও দিন কাটছে সেই বিপজ্জনক বাড়িতেই

পুর প্রশাসনের কর্তারা যদিও এই পুরনো বাড়ি নিয়ে অস্বস্তির দায় চাপাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দাদের উপরেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২১ ০৬:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রবল ঝড়বৃষ্টি বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস থাকলে তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয় ঠিকই, কিন্তু অন্য সময়ের টানা বৃষ্টিতে তাঁদের নিয়ে পুর প্রশাসনের তেমন কোনও হেলদোল থাকে না বলেই অভিযোগ। আবার অনেক সময়ে তাঁরা নিজেরাও অন্যত্র সরে যেতে চান না। তাই বিপদ মাথায় নিয়েই দিন কাটে শহরের কয়েকশো পুরনো ও বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের। যেমন কাটছে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে। এর মধ্যে আবার বিপজ্জনক বাড়ির অংশবিশেষ ভেঙে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে কয়েকটি জায়গায়। তবু বিপদ জেনেও বিপজ্জনক বাড়ি আঁকড়েই পড়ে রয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

Advertisement

যেমন, মহাত্মা গাঁধী রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ মোড় থেকে হাওড়ার দিকে যাওয়া রাস্তায় ডান দিকের পুরনো পাঁচতলা বাড়িটি। বিপজ্জনক বোর্ড লাগানো হলেও ওই বাড়িতেই এখনও পড়ে আছেন আট ঘর ভাড়াটে। বাড়িটির সিঁড়ি বহু জায়গাতেই ভেঙে গিয়েছে, প্রায় সর্বত্র ফাটল ধরিয়েছে বটগাছ। অবস্থা এমনই যে, বারান্দায় পা রাখলেই কাঁপতে শুরু করে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বাড়ির উঠোনে হাঁটুজল জমেছে। ওই বাড়ির বাসিন্দা সুখদেব সিংহ বললেন, “এ বাড়ি ভেঙে না-পড়া পর্যন্ত কেউ ছাড়বে না। তা হলে আমরাই বা ছেড়ে দিয়ে জায়গা হাতছাড়া করব কেন? তা ছাড়া, জলে আটকে আমরা কেমন আছি, কেউ সেই খোঁজটুকুও নিতে আসেননি।”

একই রকম অভিযোগ আমহার্স্ট স্ট্রিটের বিপ্লবী পুলিন দাস স্ট্রিটের পুরনো বাড়ির বাসিন্দাদের। বছর কয়েক আগেই বৃষ্টির মধ্যে ওই বাড়ির সিঁড়ি-সহ একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল। এখন সেখানে নতুন সিঁড়ি উঠলেও বিপজ্জনক অংশের ভয় কাটেনি।

Advertisement

শোভাবাজারের নন্দন বাড়ির অবস্থাও তথৈবচ। শরিকি বিবাদের কারণে পুরনো বাড়িটির বহু অংশেরই সংস্কার করা হয়নি। কয়েক বছর আগে সেখানকার বাসিন্দা, শয্যাশায়ী এক বৃদ্ধের ঘরের একাংশ ভেঙে পড়ে। সে বার কোনও মতে তিনি রক্ষা পান। এখনও টানা বৃষ্টির মধ্যে ওই বাড়িতেই আটকে তিনি। ২০১৬ সালে আবার বিপজ্জনক বাড়ির বেহাল দশার কথা জানাতে স্থানীয় পুর প্রতিনিধির দ্বারস্থ হয়েছিলেন ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাসিন্দারা। পুর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাড়িটি ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয় দু’জনের। ওই ঘটনার পরে আজও সেই বাড়ি ফাঁকা হয়নি।

পুর প্রশাসনের কর্তারা যদিও এই পুরনো বাড়ি নিয়ে অস্বস্তির দায় চাপাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দাদের উপরেই। পুরকর্তাদের দাবি, বছর পাঁচেক আগেই পাশ হওয়া পুর আইন
৪১২ (এ)-এ পুরনো বাড়ি সংস্কারে উৎসাহ দিতে একাধিক ছাড় ঘোষণা করা হয়। তাতে বলা হয়, বিপজ্জনক বাড়ি ঘোষণা করে পাঠানো নোটিসকে ‘কনডেমড’ নোটিস বলে ধরা হবে। তাতে বিপজ্জনক বাড়িটির মালিককে বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হবে। সে জন্য ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো’ বা এফএআরের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে। বাড়ির মালিক সংস্কার করতে না পারলে ভাড়াটেরা, এবং তাঁরাও না পারলে সংস্থাm লাগিয়ে সেই কাজ করে দেবে পুরসভা। কিন্তু এর পরেও শহরের একাধিক পুরনো বিপজ্জনক বাড়ির বিপদ কাটেনি। বর্তমানে
শহরে এমন ১০০টি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে, যা নিয়ে ঘুম ছুটেছে পুর কর্তৃপক্ষের।

তার পরেও বৃষ্টির বিপদ বুঝে সেখানকারবাসিন্দাদের অন্যত্র সরানো হল না কেন? দ্রুত বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম।
প্রশাসকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য দেবাশিস কুমার বলছেন, “এমন টানা বৃষ্টি হবে তো বোঝা যায়নি। প্রচুর পুরনো বাড়ি শরিকি বিবাদের জেরেই সংস্কার না হয়ে পড়ে রয়েছে। আইন তৈরি করেও সুরাহা হয়নি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement