বহুতলের নকশার অনুমোদন দিয়েই দায় সেরেছিল পুরসভা। কিন্তু খোঁজ নেয়নি নির্মাণ আইন মেনে হচ্ছে কি না। ভারী বৃষ্টিতে এলাকা জলমগ্ন হওয়ার পরে জানা গেল, বহুতল নির্মাণ করতে গিয়ে ফুটপাথ, নিকাশি নালা— সব কিছুরই দখল নিয়েছেন নির্মাণকারীরা। অন্তত ৫৮টি জায়গায় এমনটা হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
দিন কয়েক আগে অল্প দিনের ব্যবধানে জলমগ্ন হয়ে পড়ে হলদিরাম আর চিনার পার্ক এলাকা। কারণ খতিয়ে দেখতে হিডকোর আধিকারিক-সহ অন্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শনে যান স্থানীয় রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। মন্ত্রী দেখেন, চিনার পার্কের কাছে বড় বড় বহুতলগুলি ফুটপাথ ও সরকারি নালা দখল করে বুজিয়ে দিয়েছে। অথচ ওই নালা দিয়েই বিমানবন্দর এলাকার জল বেরোয়।
পূর্ণেন্দুবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিমানবন্দরের নিকাশি নালা যার জল গিয়ে পড়ে বিবি-১ নম্বর খালে, সেই নালাটি দখল হয়ে গিয়েছে। একটি নির্মীয়মাণ আবাসনের ভিতরের রাস্তা ওই নালার উপর দিয়ে তৈরি হয়েছে। টিনের দেওয়াল দিয়ে জায়গাটি ঘিরেও ফেলা হয়েছে। ছ’ফুটের নালাটির মুখ দখল হয়ে প্রায় দু’ফুট সরু হয়ে গিয়েছে। ফলে নালা দিয়ে বিমানবন্দরের জল ঠিক মতো নামছে না।’’
মন্ত্রীর আরও অভিযোগ, দখলকারীদের মধ্যে বেসরকারি নির্মাণ সংস্থার বড় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা শাসককের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’’
সিটি সেন্টার ২-এর পাশে রয়েছে ওই সব নির্মীয়মাণ আবাসন আর বাণিজ্যিক বহুতল। যারা ফুটপাথ জবরদখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ। মন্ত্রীর দাবি, ওই এলাকায় মোট ৫৮টি জায়গায় বেআইনি ভাবে সরকারি জায়গা দখল করা হয়েছে। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘যারা দখল করে আছেন, সকলকে নোটিস পাঠানো হবে।’’
ওই এলাকায় পৌঁছে দেখা গেল, একের পর এক বহুতল, রেস্তোরাঁ, দোকান গজিয়ে গিয়েছে। নির্মীয়মাণ আবাসনটির সামনে দাঁড়িয়ে চোখে পড়ল দখল হয়ে যাওয়া নালাটিও। পাশের এক রেস্তোঁরায় এ নিয়ে কথা বলার চেষ্টাও করা হয়। তবে সেখানকার কর্মীরা জানান, তাঁরা কিছুই জানেন না।
উল্লেখ্য, ওই সব জায়গায় বহুতল আবাসন-সহ বিভিন্ন নির্মাণের নক্শা অনুমোদন করেছিল সিপিএম পরিচালিত রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা। যে পুরসভার তৎকালীন সিপিএম চেয়ারম্যান ছিলেন তাপস চট্টোপাধ্যায়। বর্তমানে তাপসবাবু তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। নালা বা ফুটপাথ দখল হওয়া সত্ত্বেও কী করে পুরসভার নজর এড়িয়ে গেল? উত্তর এড়িয়ে পূর্ণেন্দুবাবু শুধু বলেন, ‘‘এখন বিষয়টি জানা গিয়েছে। প্রশাসনকে নিয়ে গিয়ে সব দেখিয়েছি। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’
তাপসবাবু জানান, পুর-আইন মেনেই নক্শা অনুমোদন করেছে পুরসভা। যদি বেআইনি কিছু হয়ে থাকে তা পরে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার সেই পরিকাঠামো ছিল না যে নির্মাণকাজ বেআইনি ভাবে হচ্ছে কি না দেখবে। প্রশাসন এখন ওই সব বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দিক।’’
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক মনমিত চন্দ বলেন, ‘‘ওই জায়গাটির মধ্যে হিডকোর একটি ব়ড় অংশ রয়েছে। হিডকো রিপোর্ট দিলে দখলকারীদের উচ্ছেদের জন্য যুগ্ম ভাবে নোটিস দেওয়া হবে।’’