—ফাইল চিত্র।
কলকাতার ৫৮টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে হকার বসানো যাবে না। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার অন্দরে টাউন ভেন্ডিং কমিটির এই রিপোর্টটি নিয়ে ফের এক বার আলোচনা শুরু হয়েছে। কলকাতা শহরের ফুটপাথ থেকে জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশের পরেই মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া হাই পাওয়ার কমিটি বৈঠক করে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। সঙ্গে কলকাতার ফুটপাতে বসা হকারদের নিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। এ সবের মধ্যে পুরসভার অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে হকার সংক্রান্ত বিষয় টাউন ভেন্ডিং কমিটির একটি রিপোর্ট নিয়ে। যদিও টাউন ভেন্ডিং কমিটির এই রিপোর্ট নতুন বিষয় নয় পুর আধিকারিকদের কাছে। গত বছর ৪ অগস্ট বেহালা চৌরাস্তায় বড়িশা স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের ছাত্র সৌরনীল সরকারের পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর সেই রিপোর্টটি জমা পড়েছিল কলকাতা পুরসভার কাছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ ৫৮টি মোড়ে কোনও হকারের ডালা বসতে দেওয়া যাবে না। শুধু তা-ই নয়, মোড়গুলি থেকে ৫০ ফুটের মধ্যে কোনও হকার বসতে পারবেন না।
কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, গত এক বছরে কেন এই রিপোর্ট হাতে থাকা সত্ত্বেও তা কার্যকর করা যায়নি? এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ কলকাতা পুরসভার কোনও আধিকারিক। কারণ, বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর করতেই বেশি আগ্রহী পুরসভার আধিকারিকেরা। পুরসভা এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ফুটপাথ দখল করে হকার বসে রয়েছে বলেই রাস্তা দিয়ে পথচারীদের হাঁটতে হয়। এ বার গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংগুলো নিয়ে নতুন ভাবে পরিকল্পনা শুরু করেছে পুর কর্তৃপক্ষ। তাই সমীক্ষার কাজ যেমন হচ্ছে, তেমনই হকারদের নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কথাও ভাবা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, ভেন্ডিং কমিটির রিপোর্ট অবশ্যই পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে। তবে পুরোপুরি সেই রিপোর্ট কার্যকরই হবে কি না, তা এখনও বলার সময় আসেনি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর কলকাতা পুরসভার তরফে কর্মীদের হকার সমীক্ষার কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ১৫০ জনকে। সমীক্ষার কাজ করতে এক একটি হকার জ়োনে কমবেশি ১০টি করে দল নামে। প্রতিটি দলে চার-পাঁচ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী এই কাজ শুরু করে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৪০টি এমন টিম নামানো হয়েছে। কোন রাস্তায় কত হকার বসছেন, তাঁদের নাম, ঠিকানা-সহ যাবতীয় তথ্য অ্যাপে নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৫ সালের তালিকা অনুযায়ী শহরে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার হকার থাকার কথা। কিন্তু সমীক্ষায় জানা গিয়েছে গত নয় বছরে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলেই মত হকার নেতাদের। আপাতত কলকাতা পুরসভার সমীক্ষা শেষ হলে পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে হকার সংগঠনগুলি। এ ছাড়া টাউন ভেন্ডিং কমিটির রিপোর্টের দিকে কলকাতা পুরসভা নজর দেয় কি না, সে দিকেও নজর রয়েছে তাদের। তবে ভেন্ডিং কমিটির রিপোর্ট প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার একাংশের বক্তব্য, বামফ্রন্টের শেষ মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্যের আমলে টাউন ভেন্ডিং কমিটি এই ধরনের একটি রিপোর্ট কলকাতা পুরসভাকে দিয়েছিল। ২০১০ সালে বিকাশবাবু মেয়রের দায়িত্ব থেকে চলে যাওয়ার পর এত বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও সেই রিপোর্ট নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য হয়নি পুর প্রশাসনে।