ফাইল চিত্র।
প্রশাসকমণ্ডলীর ‘ব্যর্থতা’র জন্য আর্থিক সমস্যা প্রকট হয়েছিল আগেই। এ বার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত দেড় বছর ধরে চলা কোভিড পরিস্থিতি। জোড়া এই সমস্যায় মুখ থুবড়ে পড়েছে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। এক দিকে তীব্র আর্থিক সঙ্কট। যার জেরে চার মাস বেতন হয়নি সমিতির কর্মীদের। অন্য দিকে, ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক লঞ্চ। কর্মচারীদের আশঙ্কা, এ ভাবে চললে যে কোনও দিন জলপথ পরিষেবাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির নির্বাচিত প্রশাসনিক বোর্ড ভেঙে দেয় রাজ্য সমবায় দফতর। তার পর থেকে দফতর-নিযুক্ত অফিসারেরা প্রশাসকমণ্ডলীর দায়িত্ব নিয়ে ওই সমবায় সমিতি পরিচালনা করছেন। সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে তাদের স্থায়ী কর্মী আছেন ৩২০ জন। অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ১২৮। এই সমিতির তত্ত্বাবধানে হাওড়া-চাঁদপাল, হাওড়া-আর্মেনিয়ান, শিবপুর-চাঁদপাল, হাওড়া-বাগবাজার, নাজিরগঞ্জ-মেটিয়াবুরুজ সহ আরও কয়েকটি রুটে লঞ্চ চলাচল করে। কোভিড পরিস্থিতির আগে দৈনিক ৬০-৭০ হাজার যাত্রী এই সব রুটে যাতায়াত করতেন। কিন্তু গত বছর করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে যাত্রীসংখ্যা কমতে শুরু করে। ফলে, টিকিট বিক্রি করে অর্জিত আয়ও পৌঁছয় তলানিতে।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, গত বছর পুজোর আগে তিন মাস সমিতির কর্মীদের বেতন দেওয়া যায়নি। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের একাংশের হাতে আক্রান্ত হন সমিতির এক প্রশাসক। শেষমেশ রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়ের উদ্যোগে অর্থ দফতর দু’কোটি টাকা অনুমোদন করায় কর্মীদের বেতন হয়। গত বছরের শেষে যাত্রীসংখ্যা কিছুটা বাড়লেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফের যাত্রী সংখ্যা কমতে থাকে। ফলে আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মীদের বেতন, পিএফ, গ্র্যাচুইটি দিতে এবং লঞ্চের রক্ষণাবেক্ষণে মাসে খরচ হয় ৬০ লক্ষ টাকা। সেখানে সব লঞ্চঘাট থেকে টিকিট বিক্রি করে বর্তমানে আয় হচ্ছে ৩০ লক্ষ টাকা। ফলে ৩০ লক্ষ টাকার ঘাটতি থেকে যাওয়ায় বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে সব কর্মীর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ‘‘আমরা বেতন না-পাওয়ায় পরিবার নিয়ে সমস্যায় রয়েছি ঠিকই। কিন্তু দিনের পর দিন লঞ্চগুলি রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় যাত্রীদের নিয়ে পারাপার করাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’’
সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, খারাপ হয়ে ইতিমধ্যে আর্মেনিয়ান ঘাটে পড়ে আছে আটটি বড় লঞ্চ। সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করে পরিবহণ দফতর। গত বছর ওই দফতর থেকে লঞ্চ মেরামতির জন্য ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি লঞ্চও মেরামত করা হয়নি। এ ছাড়া আরও চারটি লঞ্চ জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। কর্মীদের আশঙ্কা, সেগুলি যে কোনও দিন মাঝনদীতে খারাপ হয়ে বড় বিপদ ঘটতে পারে।
কর্মীদের বক্তব্য, জলপথ পরিবহণে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থাকে রাজ্য সরকারের কোনও দফতর অধিগ্রহণ না করলে সংস্থাটি বন্ধের দিকে এগোবে। সংস্থার এক প্রবীণ কর্মী বলেন, ‘‘আমাদের বেতন অত্যন্ত কম। রাজ্যের সমবায় দফতর বা পরিবহণ দফতর সংস্থাকে অধিগ্রহণ না করলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।’’
এ ব্যাপারে সমবায়মন্ত্রী তথা মধ্য হাওড়ার বিধায়ক অরূপবাবু বলেন, ‘‘গত বছর ওই সমিতিকে দু’কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। কর্মীদের বকেয়া বেতন যাতে মিটিয়ে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা চলছে। আমরা অর্থ দফতরের কাছে এর জন্য আবেদন করেছি।’’