২০০৫-এর অক্টোবরে শপথ নেওয়ার পরেই বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত জানিয়েছিলেন, পেশাদারি কাজের মানসিকতা গড়ার সঙ্গে সঙ্গেই গড়ে তুলতে হবে মানানসই পরিকাঠামো। আর সেই কথা মতো নবান্নের দেখানো পথ ধরেই পুরোপুরি কর্পোরেট ধাঁচে নতুন করে সেজে উঠেছে বিধাননগর পুরনিগমের মূল ভবন।
১৯৯৫ সালে সাবেক বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রয়াত দিলীপ গুপ্তের আমলে তৈরি হয়েছিল পুরভবন। সাদা ওই পুরভবন স্থানীয়দের কাছে ছিল সল্টলেকের ‘হোয়াইট হাউস।’ ২০১০-এ পুরসভার ক্ষমতায় আসার পরে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের ঘরের ভোল বদলালেও বাকি কোনও ঘরে তেমন রদবদল ঘটেনি।
এত দিন পুরভবনের একতলায় নানা কাজের জন্য লেগে থাকত মানুষের লাইন। এ বার বাসিন্দাদের জন্য বেসমেন্টেই থাকছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের ব্যবস্থা। সেখানেই বাসিন্দাদের অভিযোগ শুনে পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যবস্থা থাকছে। এক পুরকর্তার কথায়, বিশেষত প্রবীণ নাগরিকদের কথা ভেবে বেসমেন্টেই পরিষেবা সংক্রান্ত সব কাজের একটি সিঙ্গল উইন্ডো করা হয়েছে। যাতে তাঁদের এক তলা থেকে চার তলা বিভিন্ন কাজের জন্য ওঠানামা করতে না হয়। বেসমেন্টে সিঁড়ি ও লিফ্ট ছাড়া সরাসরি রাস্তা থেকে এক তলায় যাওয়ার দু’টি সিঁড়ি সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। কাঠ, প্লাইউড দিয়ে ঘেরা হয়েছে সেই জায়গা।
মেয়র পারিষদদের আলাদা আলাদা ঘরের ব্যবস্থা যেমন করা হয়েছে, তেমনই তাঁদের ঘরের বাইরের দেওয়ালে নাম ও পদ লেখা গ্লোসাইন রয়েছে। মেয়র পারিষদরা ঘরে থাকলেই জ্বলে উঠবে গ্লোসাইন। মেয়র ও চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রেও থাকছে একই ব্যবস্থা। মেয়র ও চেয়ারম্যানের ঘরের যাওয়ার পথে প্লাইউডের উপরে পড়েছে নীল ও ছাই রঙের প্রলেপ। মেয়র ও ভিআইপিদের জন্য আলাদা লিফ্ট, করিডোর হয়েছে। বদলেছে মেয়রের ঘরের সজ্জাও।
পাশাপাশি, নতুন ভাবে পুরনিগমের ওয়েবসাইট সংস্কার করে শুক্রবার থেকে চালু করা হয়েছে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই বাসিন্দারা পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য যেমন পাবেন, তেমনই কোনও অভিযোগ থাকলেও তা জানাতে পারবেন। কর্মীদের হাজিরা নথিবদ্ধ করার জন্য আগেই বায়োমেট্রিক সিস্টেম চালু হয়েছে।
এ ছাড়াও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। সূত্রের খবর, নবান্নের মতোই সংবাদমাধ্যমের জন্যেও পরিকল্পনার চিন্তাভাবনা রয়েছে। পুরকর্তাদের কথায়, স্মার্ট সিটি মিশনকে সামনে রেখে পরিকাঠামোর সংস্কার করা হচ্ছে। বাসিন্দারা এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানালেও তাঁদের বক্তব্য, কর্পোরেট ধাঁচের পরিকাঠামোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পরিকাঠামো যত উন্নতই হোক না কেন, মেয়র থেকে শুরু করে সাধারণ স্তরের কর্মীদের কাজের মানসিকতার বদল না ঘটলে আসল লক্ষ্যই অধরা থেকে যাবে।
মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘কর্পোরেট ধাঁচে পরিকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। স্মার্ট বিধাননগর গড়ে তুলতে, পরিষেবা দ্রুত বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য।’’ তবে বিরোধীদের একাংশের কথায়, পরিকাঠামো সংস্কার প্রয়োজন। তবে কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, সেটাই আসল। দত্তাবাদ থেকে মহিষবাথান আবার রাজারহাট-নিউ টাউনে একাধিক পিছিয়ে পড়া এলাকার পরিকাঠামোর সংস্কারের আগে প্রয়োজন। যদিও সে প্রসঙ্গে শাসকদলের জবাব, ক্ষমতায় এসেই সেই কাজেই দ্রুত সাফল্য পেয়েছে তারা।