Bangladesh Unrest

মূর্তিতে হাতুড়ির ঘা, শহরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি আগলে বসে বেকার হস্টেল

১৯৯৮ সালে তৎকালীন বাম সরকার বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধায় হস্টেলের ২৪ নম্বর ঘরটি ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ’ হিসাবে সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়। ওই বছর শেখ হাসিনাও এই ছাত্রাবাসে এসেছিলেন।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৪ ০৭:২৪
Share:

স্মৃতিকক্ষ: বেকার হস্টেলের এই ঘরেই ছাত্রাবস্থায় আবাসিক হিসাবে থাকতেন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ছাত্রাবাসের ২৪ নম্বর ঘর। বাইরে বড় বড় করে লেখা ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ’। ১৯৪৫-’৪৬ সালে বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজ বা পূর্বতন ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান। আবাসিক হিসাবে থাকতেন কলেজের অধীনে থাকা তালতলার বেকার হস্টেলের তেতলায়, ২৪ নম্বর ঘরে। সোমবার থেকে তাঁর কথা ঘুরেফিরে আসছে আবাসিকদের আলোচনায়। বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার যে কায়দায় বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে, তাঁর মুরাল কালিমালিপ্ত করা হয়েছে, তাতে ব্যথিত তাঁরা।

Advertisement

১৯৯৮ সালে তৎকালীন বাম সরকার বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধায় হস্টেলের ২৪ নম্বর ঘরটি ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ’ হিসাবে সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়। ওই বছর শেখ হাসিনাও এই ছাত্রাবাসে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে প্রতি বছর ২৪ নম্বর ঘরটি খুলে স্মরণসভা করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ওই ঘরে ঢুকে দেখা গেল, এক কোণে রাখা খাট। উপরে সাদা চাদর। মাথার দিকে জলরঙে আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছাত্রাবস্থার ছবি। খাটের পাশে রাখা চেয়ার, টেবিল। যেখানে বসে পড়াশোনা করতেন তিনি। টেবিলের উপরে সার দিয়ে রাখা বঙ্গবন্ধুর লেখা একাধিক বই। দেওয়ালে রয়েছে অজস্র ছবি। ঘরে ঢুকতেই ডান দিকের ফ্রেমে কাজী নজরুল ইসলামের গলায় মালা পরিয়ে দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। ছবির নীচে লেখা ‘২৪ মে, ১৯৭২। বিদ্রোহী কবি নজরুলকে ঢাকায় নিয়ে এলেন শেখ মুজিব’। আবার রয়েছে শেখ হাসিনাকে নিয়ে মুজিবের হাসিমাখা ছবি। কোনও ফ্রেমে স্কুলপড়ুয়াদের হাত থেকে ফুল নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। কোনও ছবিতে আবার দেখা গেল, বঙ্গবন্ধুর শপথ অনুষ্ঠানে পাশে বসে রয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী।

২৪ নম্বর ঘরের সামনেই ১৫ নম্বর ঘরে থাকেন আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আবদুল্লাহ ফরিদ। ছবিগুলি দেখাতে দেখাতে তিনি বললেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমাদের দেশের মধুর সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশের রূপকার তিনি। অথচ, সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম, ও-পারে বিভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কোথাও কালি মাখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা সর্বস্তরের বাঙালির কাছেই অপমানজনক।’’ হস্টেলের আর এক আবাসিক, মালদহের বাসিন্দা, পদার্থবিদ্যার পড়ুয়া শুভ হোসেনের কথায়, ‘‘কোটা তুলে দেওয়ার আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় যা ছবি দেখলাম, তাতে মনটাই ভারাক্রান্ত হল। মুজিবুরের মূর্তি ভাঙার মতো প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিত ছিল না।’’ বেকার হস্টেল লাগোয়া ইলিয়ট হস্টেলের সুপার তাজদার আলি মির্জার কথায়, ‘‘শেখ মুজিব মৌলানা আজাদ কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন, এটা আমাদের গর্ব। কিন্তু বাংলাদেশে তাঁকে যে ভাবে অপমান করা হচ্ছে, ধানমণ্ডির সংগ্রহশালা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা দেখে খারাপই লাগছে।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement