ফাইল ছবি
বাগদার ‘রঞ্জন’-এর পরে এ বার রাজারহাটের মাস্টারমশাই। পেশায় একটি স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক তিনি। এলাকার খবর, মাস্টারমশাইয়ের হাত অনেক লম্বা। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত। অভিযোগ, স্কুলে বেআইনি নিয়োগে রয়েছে রাজারহাটের ওই মাস্টারমশাইয়ের হাতের খেল। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মাস্টারমশাই অনেককে শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন, এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি রাজারহাট থেকে সিবিআইয়ের দফতরে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠিতেই মাস্টারমশাইকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে দাবিকরা হয়েছে।
নিউ টাউনের পিছনে একটি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা মাস্টারমশাইয়ের হাত ধরে পাথরঘাটা, জ্যাংড়া, চাঁদপুর, কাঞ্জিলাল পাড়া, ঘুনি-সহ রাজারহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুলের চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নিজেদের ‘হতভাগ্য চাকরিপ্রার্থী’ দাবি করে সিবিআইকে যাঁরা চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা চিঠিতে কারা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের পরিচয় কী, সেই সব তথ্য দিয়েছেন বলেই খবর। শুক্রবার দুপুরে মাস্টারমশাইকে ফোন করা হয়। কিন্তু কয়েক বার রিং হওয়ার পরেই ফোন বন্ধ হয়ে যায়। কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে তাঁকে ফোনে মেসেজও পাঠানো হয়। তারও উত্তর আসেনি। রাতে ফের এক বার ফোন করা হলে তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে।
পাথরঘাটা এলাকায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে মাস্টারমশাইয়ের নাম। অনেকেরই দাবি, তদন্তের জাল ঠিকঠাক ছড়ালে তাঁকে নিয়েও টানাটানি হতে পারে। মে মাসে রাজারহাট থেকে ওই চিঠি পোস্টে পাঠানো হয়েছে সিবিআই দফতরে। স্থানীয়দের বক্তব্য, বাগদার রঞ্জনকে প্রকাশ্যে এনে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন শাসক দলেরই প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। তার পরেই রঞ্জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিবিআই। স্থানীয়দের দাবি, রাজারহাটের ওই মাস্টারমশাই ও তাঁর দ্বারা উপকৃতদের সঙ্গেও কথা বলুক তদন্তকারী সংস্থা।
সূত্রের খবর, সিবিআইকে পাঠানো ওই চিঠিতে চাকরি প্রাপকদের তালিকায় রাজারহাট এলাকার শাসক দলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নামেরও উল্লেখ রয়েছে। চিঠিতে জোর দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, চাকরি দেওয়ার জন্য ১২-১৫ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়েছে প্রার্থীদের থেকে। একই পরিবার থেকে তিন জনের এক জন শিক্ষক এবং দু’জন সহকারী শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। তিনটি ভিন্ন স্কুলে এঁরা চাকরি পেয়েছেন বলেও চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে। শিক্ষক কিংবা সহকারী শিক্ষকের পাশাপাশি গ্রুপ সি-এর চাকরি পেয়েছেন, এমন অভিযোগও চিঠিতে করা হয়েছে। চিঠির শেষে অভিযোগ,চাকরি প্রাপকেরা কেউ পরীক্ষা না দিয়ে বিভিন্ন ক্ষমতাবলে কাজে যোগ দিয়েছেন।
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পরে রাজারহাট এলাকায় সবেমাত্র নজর পড়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)।বৃহস্পতিবার রাজারহাটের চিনার পার্কে অর্পিতার নামে থাকা ফ্ল্যাটে হানা দেন ইডি-র আধিকারিকেরা। রাজারহাটের বাতাসে এখন গুঞ্জন, নিয়োগ-দুর্নীতির বিপুল অঙ্কের টাকা, জমি কিংবা ফ্ল্যাটের মাধ্যমে সেখানকার গ্রামাঞ্চলে বিনিয়োগ হয়ে রয়েছে। কারা সে সবে জড়িত, স্থানীয়দের মধ্যে থেকে তাঁদের খুঁজে বার করার দাবিও উঠেছে।