প্রতীকী ছবি
রক্ষণশীল সমাজের কাছে মুখ খোলার উপায় ছিল না। তাই প্রায় তিন বছর স্ত্রীর চিকিৎসা চললেও, তা সকলের কাছে গোপন রেখেছিলেন। বহু বছর আগের, গোপন রাখা সেই কথা এখন অবশ্য অনেকেই জানেন। কিন্তু ১৯৭৮ সালে যে চিকিৎসকের সহযোগিতায় তাঁর একমাত্র মেয়ে জন্ম নিয়েছিল, তিনি আজও তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি পাননি বলেই মনে করেন বৃদ্ধ প্রভাত আগরওয়াল। তিনি দেশের প্রথম টেস্টটিউব শিশু দুর্গা তথা কানুপ্রিয়া আগরওয়ালের বাবা।
দেশে প্রথম টেস্টটিউব শিশুর জনক, চিকিৎসক বিজ্ঞানী সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে যাতে তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে কোনও মরণোত্তর সম্মান প্রদান করা হয়, তার জন্য শনিবার এক সভার আয়োজন করেছিল ‘বার্থ ইনস্পায়ার ফাউন্ডেশন’। হাজির ছিলেন চিকিৎসক, সাহিত্যিক, কবি থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা। সংস্থার কর্ণধার, বন্ধ্যাত্ব রোগের চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর বলেন, ‘‘বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসায় যুগান্তকারী অগ্রগতি এনেছিলেন সুভাষবাবু।
কিন্তু এখনও তাঁর সম্পর্কে সবাই জানেন না।’’
গৌতমবাবুর দাবি, বিদেশে সুভাষবাবুকে বিভিন্ন সম্মান দেওয়া হলেও দেশে কিংবা রাজ্যে তিনি এখনও ব্রাত্য। তাঁর কথায়, ‘‘সুভাষবাবুর সৃষ্টিকে স্বীকৃতি দিতে কয়েক বার কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু প্রতি বারই শুনতে হয়েছে, বঙ্গসমাজ থেকে তো কখনও এই আবেদন আসেনি। তাই আজ সকলে মিলে প্রচেষ্টাটি শুরু করছি।’’ তাতে শামিল হতে অক্টোবরে শহরে আসবেন কানুপ্রিয়া ও বিশ্বের প্রথম টেস্টটিউব শিশু লুইজ় ব্রাউন।
সম্প্রতি এন আর এস মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী সংগঠনের দাবি মতো সেখানকার হস্টেলের নামকরণ সুভাষবাবুর নামে করা, তাঁর মূর্তি বসানো এবং তিনি যে ঘরে থাকতেন, তার দেওয়ালে ফলক লাগানোর ছাড়পত্র দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু দেশে টেস্টটিউব বেবির জনকের প্রতি এই সম্মান খুবই ক্ষুদ্র বলে মনে করেন এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই। সেই সূত্রেই সুভাষবাবুর নামে রাস্তা, মেডিক্যাল কলেজের নামকরণ এবং তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানোর কথা উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী জানান, পাঠ্যসূচিতেও সুভাষবাবুর বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করার জন্য তিনি সিলেবাস কমিটির কাছে দাবি জানাবেন। একই রকম ভাবে ৪৩ বছর আগের ওই স্রষ্টাকে আগামী প্রজন্মের কাছে বাঁচিয়ে রাখতে তথ্যচিত্র, বায়োপিক এবং বার্ষিক আলোচনাসভার প্রস্তাবও উঠে আসে।