হাবা ওরফে রতন দাস।
তিনিই এলাকার সবচেয়ে ‘বড় খেলোয়াড়’!
অভিযোগ, কখনও তিনি সিপিএম, মন্ত্রী-কাউন্সিলরের হাত ধরে তিনিই আবার তৃণমূল! তাঁর হাতে থাকলে তিনতলা বাড়ি অনায়াসেই বেআইনি ভাবে চারতলা হয়ে যায়! এলাকার এক জনের বক্তব্য, ‘‘রাজা আসে রাজা যায়, মন্ত্রী আসে মন্ত্রী যায়, শুধু হাবা বদলায় না।’’
উল্টোডাঙায় মুচিবাজারে শনিবারের রণক্ষেত্র পরিস্থিতির পরে এই হাবা ওরফে রতন দাসের সঙ্গের তকমা এড়াতেই তৎপর মন্ত্রী থেকে কাউন্সিলর, সকলে। স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান তথা কলকাতা পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিন্দ্য রাউত আবার সেই তকমা এড়াতেই বলে দিলেন, ‘‘আমি কাউন্সিলর সবে তিন বছর। হাবা এখানে ৩০ বছর ধরে দাপাচ্ছে।’’ সেই সঙ্গে বেআইনি নির্মাণে হাবার যুক্ত থাকা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে কোনও বেআইনি নির্মাণ নেই। যা আছে, সব ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে।’’ বরো চেয়ারম্যানের মুখে তাঁর অধীনের ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণের কথা শুনে অনেকে বলছেন, সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরকে তিনি সতর্ক করেছেন? ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘উনি তো বরো চেয়ারম্যান। এসে দেখিয়ে দিয়ে যান কোনটা বেআইনি। আর হাবাকে নিয়ে কারা ঘুরতেন, তা সকলে জানেন।’’
ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাতের দু’পক্ষের গোলমাল শনিবার দুপুরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। দিলীপ সিংহ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় শুক্রবার রাতেই দিলীপের ভাই বাবলু সিংহ এবং তাঁর সহযোগী সন্দেহে পাপ্পু সাঁতরাকে গ্রেফতার করে উল্টোডাঙা থানার পুলিশ। শনিবার দিলীপদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে বিল্টু শীল এবং লাল্টু দাস নামে আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে তোলা হলে এই দু’জনকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এই ঘটনায় মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: চাদর-চাপা শিশুপুত্রের দেহ, ছাদ থেকে ঝাঁপ দিলেন মা
রবিবারও ওই এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। মুচিবাজারের মোট তিনটি জায়গায় পুলিশ পিকেট মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ দিনও মূল অভিযুক্ত হাবাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের দাবি, বাম আমলে বেড়ে ওঠা হাবার বিরুদ্ধে এর আগেও বহু অভিযোগ উঠেছে। তবুও তিনি ফেরার থেকেছেন অবলীলায়। দিন কয়েক বাদে এলাকায় ফিরে আগের মতোই তাঁর দাপট শুরু হয়ে গিয়েছে।
উল্টোডাঙার রাজনীতির সঙ্গে যুক্তদের দাবি, বাম আমলে বাম নেতা রবীন পালের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার হাবার। বেআইনি নির্মাণ, বেআইনি পার্কিং, বুথ দখল, মারধর, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগ হাবার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে উল্টোডাঙা এবং তার পার্শ্ববর্তী থানায়। হাবার আসল পেশা কী, তা কেউই বলতে পারেন না। তবে স্থানীয়েরা জানান, তাঁর সম্পত্তির অভাব নেই। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ১০ চাকার চারটি লরি, দু’টি এসইউভি, ১৩ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ছ’টি বাড়ির পাশাপাশি একটি ওষুধের দোকানও রয়েছে হাবার। এক স্থানীয়ের কথায়, ‘‘বামেরা হেরে যাওয়ার পরে কিছু দিনের জন্য কোণঠাসা হয়েছিলেন এই ব্যক্তি। এর পরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিন্দ্য রাউতের হাত ধরে তৃণমূলে প্রবেশ তাঁর। হাবা এসে রাজনীতি করবেন কী, উল্টে তৃণমূলের পুরনো কর্মীদেরই মারধর শুরু করেন।’’ রবীনবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘আমাদের লোক ছিল না ও। যে দল ক্ষমতায়, সেখানে কিছু বেনো জল থাকেই। ওকে যাঁরা সঙ্গে নিচ্ছেন, তাঁরাই অপরাধী।’’
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে ‘ঢাল’ করে আধিপত্য বিস্তার বড়ে-র
প্রসঙ্গত, ক্যানাল ইস্ট রোডে সম্প্রতি একটি সেতু উদ্বোধনে গিয়ে হাবার রোষে পড়েছিলেন খোদ ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী তথা মানিকতলা কেন্দ্রের বিধায়ক সাধন পাণ্ডে। মন্ত্রীর সামনেই তাঁর অনুগামীদের হাবার লোকজন মারধর করেন বলে অভিযোগ। পরে মন্ত্রীকে বলতে হয়, ‘‘যাঁরা ওঁকে মদত দিচ্ছেন, ভুল করছেন। অন্যায় হচ্ছে।’’ সেই সময়ে হাবা কাউন্সিলরের ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের। এ দিনও সাধনবাবু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘হাবা বাম আমল থেকে এলাকায় গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। ওকে সাবধান করা হয়েছে। আর যে সমস্ত বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, তা কলকাতা পুরসভার দেখার কাজ।’’
যদিও মানিকতলা-উল্টোডাঙা এলাকার স্থানীয়দের অভিযোগ, হাবা ভাল জানেন কাকে কখন ধরতে হয়। প্রশাসন কড়া না হলে তিনি ফের এই সমস্যার বৈতরণী পার করে ফেলবেন। বহু বার চেষ্টা করেও অবশ্য হাবা ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি টেক্সট মেসেজেরও।