আড়াল: হঠাৎ বৃষ্টি দমাতে পারেনি পুজোর উৎসাহ। ছাতা মাথায় দর্শনার্থীরা। শনিবার, মধ্য কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টি। আকাশের মুখ ভার। কিন্তু তা কি আর পুজো-জনতাকে দমাতে পারে! পারেওনি। তাই সপ্তমীতে দিনের শুরু থেকেই জনস্রোতে ভাসল শহরের পুজো মণ্ডপগুলি। সাময়িক বৃষ্টিতে হয়তো শহরের গতি কিছুটা
শ্লথ হয়েছে, কিন্তু ছন্দ কাটেনি এক বারও। উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই একই চিত্র।
প্রত্যাশা মতোই ভিড়ের নিরিখে উত্তরকে টক্কর দিয়েছে দক্ষিণ কলকাতা। বৃষ্টির জেরে উৎসব যাতে পণ্ড না হয়, তার জন্য সকাল সকালই দেশপ্রিয় পার্কে হাজির হয়েছিলেন দত্তপুকুরের সৌমিক হাজরা। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তরে বেশি সময় লাগবে না। বৃষ্টি যদি এসেও যায়, উত্তর না দেখেই বাড়ি ফিরে যাওয়া যাবে। দক্ষিণ ছাড়া যাবে না!’’ দক্ষিণের শ্রীতমা দাস আবার বাগবাজার সর্বজনীনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘বনেদিয়ানা আর সাবেক প্রতিমা দেখার জন্য উত্তরই শ্রেষ্ঠ জায়গা। আমাদের গড়িয়াহাটে তেমন ঠাকুর কোথায়! বাগবাজার না দেখলে পুজো অসম্পূর্ণ!’’
উত্তর-দক্ষিণের সঙ্গেই ভিড় টানার প্রতিযোগিতায় সমানে লড়েছে মধ্য ও উত্তর শহরতলির পুজো মণ্ডপগুলি। টালা সেতুর আশঙ্কাকে হাওয়ায় উড়িয়ে টালা বারোয়ারির মণ্ডপে দাঁড়িয়ে ডানলপের অনিমেষ মাইতি বললেন, ‘‘এ বার কী করে ঠাকুর দেখব, তা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু বেরিয়ে মনে হল, যত কষ্টই হোক, পুজো এক বারই আসে!’’ বারোয়ারির সঙ্গে এ দিন সমানে টক্কর চলেছে বাড়ি-আবাসনের পুজোগুলিরও। যেমন নিউ গড়িয়া কো-অপারেটিভ আবাসনের এ বারের থিম, ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ। গোটা পুজোটাই লাল-হলুদ রঙের। পুজোর উদ্বোধনে ছিলেন কল্যাণ মজুমদার, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, মিহির বসু-সহ অনেকে। সেখানেও বহু দর্শকের ভিড়।
ভিড় সামলাতে আবার গত বারের মতোই বদ্ধপরিকর ছিলেন কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল ইলিয়াস মিয়াঁ। গত বার লাগাতার হুইসল বাজিয়ে তাঁর দর্শক সামলানোর ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। এ বারও একই উদ্যোগে তাঁকে দেখা গিয়েছে ত্রিধারা সম্মিলনীর মণ্ডপে।
জনস্রোতে মণ্ডপগুলি ভাসলেও কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের সৌজন্যে কোথাও যানজট হয়নি তেমন। প্রতি বারের মতো এ বারও দর্শক ও গাড়ির চাপ সামলাতে ষষ্ঠীর রাত থেকেই পথের দখল নিয়ে নেয় কলকাতা পুলিশ। এর মধ্যেও অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে দমকল কেন্দ্রের সঙ্কীর্ণ পরিসর নিয়ে। এ বার সেখানে মহম্মদ আলি পার্কের পুজো হচ্ছে। আগে ওই দমকল কেন্দ্র থেকে দমকলের গাড়ি সহজেই বেরিয়ে ডান দিকে ঘুরতে পারত। সে জন্য ডিভাইডারও ছিল। কিন্তু দমকলের গাড়ি ওই পুজোর জন্য এখন পাশের গলিতে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনের সময়ে সেখান থেকে গাড়ি দ্রুত বার করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লালবাজারের অবশ্য দাবি, সব রকম পরিস্থিতির কথা ভেবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ ধরনের সওয়াল-জবাবে অবশ্য আপাতত মন নেই মণ্ডপমুখী জনতার। সপ্তমীর রাতে চালতাবাগানে দাঁড়িয়ে কলেজপড়ুয়া স্নিগ্ধা ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘ক’টা ঠাকুর দেখব, তার একটা লিস্ট তৈরি করেছি। আর তো মাত্র দু’টো দিন। এখনও অনেক ঠাকুর দেখা বাকি!’’