Sealdah Station

শিয়ালদহ স্টেশন এমন হবে? ছবি প্রকাশ রেলের, আধুনিকতার ছোঁয়া পাবে বাংলা ও বাঙালির আবেগ

নতুন রূপে সাজানোর পরে শিয়ালদহ স্টেশন এবং সংলগ্ন এলাকাকে কেমন দেখতে হবে, তার একটা সম্ভাব্য ছবি প্রকাশ্যে এনেছে রেল। চেনা শিয়ালদহে সেই ছবি দেখে বিস্মিত অনেকেই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৩ ১৯:৩৭
Share:

ভোল বদলে যাচ্ছে শিয়ালদহ স্টেশনের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ভোল বদলে যেতে চলেছে শিয়ালদহ স্টেশনের। কলকাতার এই ব্যস্ত স্টেশনের যে ছবি দেখে আমজনতা অভ্যস্ত, সেই ছবিও নাকি অচিরেই বদলে যাবে বলে দাবি রেলের। নতুন চেহারা পাওয়ার পরে শিয়ালদহ স্টেশন এবং সংলগ্ন এলাকার চেহারা কেমন হবে, তার একটা ছবিও প্রকাশ্যে এনেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। আর তেমনটা হয়ে গেলে আমূল বদলে যাবে বাংলা ও বাঙালির অনেক আবেগের সঙ্গে জড়িতে এই স্টেশন।

Advertisement

শিয়ালদহ স্টেশন মানেই মানুষের মেলা। এই খানে মফস্‌সল মেলে মহানগরের সঙ্গে। সেই শিয়ালদহ স্টশনের এমন চেহারা ঠিক কবে হবে তা অবশ্য জানায়নি রেল। তবে খুব দ্রুত শেষ হবে বলে দাবি করা হয়েছে। আপাতত রূপান্তর পরিকল্পনার উদ্বোধনের দিন পাকা হয়ে গিয়েছে। শুধু শিয়ালদহ নয়, বাংলার অনেক স্টেশনেরই চেহারা বদলে যাবে। সেই সঙ্গে রয়েছে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের পূর্ব রেলের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি স্টেশনও। রবিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে গোটা প্রকল্পের সূচনা করবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

শুক্রবার শিয়ালদহ স্টেশনে এসেছিলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার এপি দ্বিবেদী। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইচ্ছা অনুযায়ী পূর্ব রেলের ২৮টি স্টেশনকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। আধুনিক ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে স্টেশনগুলিতে।” রেলের ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পের কল্যাণে অমৃতের ছোঁয়া পাবে শিয়ালদহও। স্টেশনের প্রবেশপথ, প্ল্যাটফর্ম থেকে শৌচাগার কিংবা বিশ্রামকক্ষ সব কিছুতেই বদলের ছোঁয়া লাগবে। এই কাজের জন্য মোট বরাদ্দ ২৭ কোটি টাকা। শিয়ালদহ স্টেশনে ভিড়ের কারণে ব্যস্ত সময়ে নানা রকম সমস্যা তৈরি হয় বলে যাত্রীদের অনেক দিনের অভিযোগ। সেই সমস্যারও পাকাপাকি সমাধান চায় রেল। শিয়ালদহের ভিড়কে সামাল দিতে প্রয়োজনে সংলগ্ন ট্যাক্সি স্ট্যান্ডকে সরানো যায় কি না, তা-ও বিবেচনা করে দেখছে রেল।

Advertisement

আগামী ৬ অগস্ট ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ২৮টি স্টেশনের উন্নয়ন পরিকল্পনার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রেল সূত্রে খবর, চলতি বছরেই হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা চালু হয়ে যাচ্ছে। সেটা হলে তার প্রভাব শিয়ালদহ স্টেশনেও পড়বে। প্রতি ঘণ্টায় অতিরিক্ত ৫০ হাজার যাত্রীর চাপ নিতে হতে পারে ১৬১ বছর বয়সের শিয়ালদহ স্টেশনকে। সেটা মাথায় রেখেই দ্রুত শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরের পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে চায় রেল।

শিয়ালদহ স্টেশন অনেক কারণেই বাংলা এবং বাঙালির কাছে আবেগের। প্রতি দিন কৃষ্ণনগর থেকে ক্যানিং, বনগাঁ থেকে বারুইপুর শহরতলি ও মফস্‌সলের অসংখ্য মানুষ এই স্টেশনে নেমেই ছড়িয়ে পড়েন কলকাতায়। দূরপাল্লার ট্রেনের জন্যও শিয়ালদহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালির প্রিয় ট্রেন ‘দার্জিলিং মেল’ তো ছাড়ে শিয়ালদহ থেকেই। আবার দিল্লি যাওয়ার রাজধানীও ছাড়ে এই স্টেশন থেকেই।

অনেকে বলেন, বাঙালির দুর্গাপুজোও আসে শিয়ালদহ হয়েই। আসলে গাঁ-গঞ্জের ঢাকিরা এই স্টেশন চত্বরে এসেই ঢাকের শব্দে আগমনীর বোল ছড়িয়ে দেন কলকাতার বাতাসে। আবার পুজোর ক’টা দিন কলকাতা ভেসে যায় সবচেয়ে বেশি শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নামা দর্শনার্থীদের দৌলতেই।

শুধুই কি বর্তমান? বাঙালির স্মৃতিতেও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে শিয়ালদহ স্টেশন। দেশভাগের পর ও পার বাংলা থেকে একরাশ স্মৃতি বয়ে নিয়ে আসা ছিন্নমূল বাঙালির অস্থায়ী আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল এই শিয়ালদহ স্টেশনই। শিয়ালদহ মানেই যে কোনও বাঙালি চোখ বুজলে দেখতে পায় ভিড়, সারি দিয়ে মনোহারি জিনিসের দোকান, ঘন ঘন বহুমুখী ট্রেনের যাতায়াত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর কবিতায় শিয়ালদহ বোঝাতে ‘যাত্রীর ব্যস্ততা, কুলি-হাঁকাহাঁকি’-র কথাই লিখেছেন। আসলে শিয়ালদহের পরিচয়ও লুকিয়ে ওই ভিড় আর ব্যস্ততার মধ্যে। যা দিন দিন বেড়েছে। সেই সঙ্গে বার বার বদলেছে স্টেশনের চেহারা। এ বার আরও আধুনিক হওয়ার অপেক্ষা।

শিল্পীর কল্পনায় শিয়ালদহ স্টেশন। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement