রেলভবনে আগুন। নিজস্ব চিত্র।
আগুন লাগলে কী করবেন না, তা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেন দমকলকর্মীরা। লিফ্টে না ওঠার পরামর্শও প্রায়শই দিয়ে থাকেন তাঁরা। কিন্তু নিউ কয়লাঘাটে রেলভবনের আগুনের উৎস খুঁজতে কেন লিফ্টে করে গেলেন দমকলকর্মীরা? এ ভাবে যাওয়ার জন্য কে বা কারা নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁদের? মৃত ৫ দমকলকর্মীর যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব ছিল? রেলভবনে সোমবারের আগুনে ৫ দমকলকর্মীর মৃত্যুর পর এই প্রশ্নগুলি উঠছে। ঘটনা নিয়ে চাপানউতর চলছে খোদ দমকলের অন্দরে। মুখ না খুললেও ক্ষোভে ফুঁসছেন মৃতদের সহকর্মীরা। তবে দমকলের আধিকারিকরা এই বিষয় নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এই সব অপ্রিয় প্রশ্ন শুনলেই এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত দমকলকর্মীর মধ্যে ৩ জন অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। রেলভবনের আগুন নেভাতে স্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছিলেন তাঁরাও। কিন্তু অগ্নিনির্বাপণে কঠিন পরিস্থিতির মোকবিলা করার মতো প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কি তাঁদের ছিল না? এই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। অস্থায়ী দমকলকর্মীদের স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় না বলেও সে সময় অভিযোগ করেছিলেন অস্থায়ী কর্মীরা।
সোমবার আগুন লাগার পরেও ওই ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ কেন বিচ্ছিন্ন করা হয়নি, সে প্রশ্নও উঠছে। সেই অবস্থাতেই লিফ্টে করে আগুনের উৎস খুঁজতে ছুটে গিয়েছিলেন দমকলের ওই কর্মীরা। লিফ্টে করে দমকলকর্মীদের যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সোমবার রাতেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আগুন লাগলে লিফ্ট ব্যবহার করতে নেই। কিন্তু হয়তো ওঁরা খুব দক্ষ ছিলেন। তাড়াহুড়োর জন্য উঠেছিলেন। লিফ্টে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে। খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’’ তবে এই বিষয়গুলি নিয়ে যে কোনও প্রশ্নই এড়িয়ে গিয়েছেন দমকলের শীর্ষ আধিকারিকরা।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে দমকলের তরফে। আগুন লাগার পর রেলভবনের নকশা চাওয়া হয়েছিল রেলের কাছে। কিন্তু তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। দমকমকর্মীরা লিফ্টে উঠছেন দেখে সেখানে আটকে থাকা বাকিরা ভেবেছিলেন তাঁদের প্রাণের আশঙ্কা নেই। কিন্তু লিফ্টে উপরে যাওয়াই যে কাল হয়েছে, তাও মনে করছেন অনেকে।
পাশাপাশি রেলের ওই ভবনে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল কি না, তা নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে দমকল। নিউ কয়লাঘাটে রেলের অফিসে প্রতিদিন লেগে থাকে প্রচুর মানুষের যাতয়াত। রেলেরও প্রচুর কর্মী বসেন এই অফিসে। কিন্তু সোমবার এখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কাজে আসেনি বলে অভিযোগ। এমনকি ফায়ার অ্যালার্মও বাজেনি। এই বিষয়টি নিয়েও তদন্ত করা হবে দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণে রেলের তরফে কোনও গাফিলতি ছিল কি না, তাও তদন্ত করে দেখা হবে।