—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাজ্য ও কলকাতার পুলিশকর্মীদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে করোনা-পর্বে গড়া ‘পুলিশ কল্যাণ পর্ষদ’ নিয়েই অভিযোগ উঠছে বাহিনীর অন্দরে।
পুলিশবাহিনীতে বঞ্চনা ও নানা অভিযোগের চোরা স্রোত দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। করোনা আবহে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে একাধিক বার। কলকাতার পুলিশ ট্রেনিং স্কুল এবং সল্টলেকে সশস্ত্র বাহিনীর অফিসে বিক্ষোভ থামাতে যেতে হয়েছিল বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের। এমনকি, করোনা আবহে কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে যেতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকেও। সেখানেই তিনি রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের নিচু এবং মাঝারি তলার কর্মীদের অভাব-অভিযোগ শুনে তার সমাধানের জন্য পুলিশ কল্যাণ পর্ষদ বা পুলিশ ওয়েলফেয়ার বোর্ড গঠন করার কথা বলেছিলেন।
পুলিশকর্মী ও তাঁদের পরিবারের জন্য পর্ষদ গড়া হলেও সেটির গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকারের ‘আস্থাভাজন’ অফিসারকেই নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল প্রথম থেকে। যদিও শুরু থেকেই ওই পর্ষদ পুলিশকর্মীদের কল্যাণে কিছু কাজ করে জনপ্রিয় হয়েছিল বলে লালবাজারের অন্দরের খবর।
তবে যত দিন যাচ্ছে, পুলিশ কল্যাণ পর্ষদ ধীরে ধীরে ততই ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে, কলকাতা পুলিশে তাদের এতটাই প্রভাব যে, কর্মীদের কল্যাণে কাজ করলেও তাঁদের বদলি থেকে ডিউটি, সবেতেই নাক গলানোর অভিযোগ রয়েছে পুলিশ কল্যাণ পর্ষদ বা পুলিশ ওয়েলফেয়ার বোর্ডের একাংশের বিরুদ্ধে। কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করা একাধিক কর্মীর কথায় সেই সমর্থন মিলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্মী জানান, পদস্থ কর্তাদের ঘরের বাইরে কারা ডিউটি করবেন, তা-ও ঠিক করে দেয় কল্যাণ পর্ষদের ওই অংশ। এমনকি, ভোটের সময়েও কল্যাণ পর্ষদের তরফে অলিখিত নির্দেশ দিতেন তাঁরা। এর সঙ্গেই অভিযোগ, পর্ষদের সদস্যেরা ছড়ি ঘোরান সাধারণ পুলিশকর্মীদের উপরে।
অভিযোগের সত্যতা এক প্রকার মেনে নিয়ে পুলিশ কল্যাণ পর্ষদের একাংশের দাবি, অভিযুক্ত এক কর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর আমলের সব অনিয়ম খতিয়েও দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশ কল্যাণ পর্ষদের কোর কমিটিতে সদস্য সংখ্যা ২৬৮। এ ছাড়া, কলকাতা পুলিশের সব স্তরের পুলিশকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার, হোমগার্ড— সকলেই কল্যাণ পর্ষদের সাধারণ সদস্য। আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সিভিক ভলান্টিয়ার তেমনই এক সাধারণ সদস্য বলে দাবি করেছে কল্যাণ পর্ষদ। এর বাইরে তার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই বলেও তাদের দাবি। যদিও লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি, কলকাতা পুলিশের তরফে যাঁরা আর জি করে ভর্তি হতেন, তাঁদের দেখাশোনা করতেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। চতুর্থ ব্যাটালিয়নের এক অফিসারের হস্তক্ষেপেই অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার ওই কাজ করত। তাঁর সঙ্গে আবার পুলিশ কল্যাণ পর্ষদের যোগাযোগ রয়েছে।