Homeopathy Medical College

হোমিয়োপ্যাথি কলেজের অধ্যক্ষের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

কলকাতার ডি এন দে হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলকুমার মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তিনি পুনর্বহাল হন, তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৯
Share:

হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।

দীর্ঘ দিন ধরেই এক সরকারি হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে ঘিরে চলছে বিতর্ক। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। আরও অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরে এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা পড়লেও কিছু হয়নি। বরং অবসরের পরেও ওই অধ্যক্ষকে পুনর্বহাল করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

কলকাতার ডি এন দে হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলকুমার মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তিনি পুনর্বহাল হন, তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে যে অদৃশ্য শক্তির কথা শোনা যায়, এই ঘটনার নেপথ্যেও কি তেমন কেউ আছেন? স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের কথায়, ‘‘গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে উত্তরবঙ্গ লবি। তাদের মাধ্যমেই পুনর্বহাল হতে পারেন ওই অধ্যক্ষ।’’ ২০২১-এ অবসরের পরে শ্যামলকে ২০২৩-এর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পুনর্বহাল করা হয়। প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই তিনি অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে হোমিয়োপ্যাথি শিক্ষক-চিকিৎসকদের সংগঠন। তাদের দাবি, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর পেনশনের ৩০ শতাংশ কেটে নিতে ২০২২-এ নির্দেশ দেয় রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশন।

সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব হোমিয়োপ্যাথির (সিসিএইচ) নিয়মানুযায়ী, যে কোনও হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ হতে গেলে বিএইচএমএস পাশের পরে এক বছরের ইন্টার্নশিপ ও এমডি ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। শ্যামল ডি এন দে কলেজ থেকে ওই ডিগ্রি নিয়েছেন বলে দাবি করলেও সেখানকার বিএইচএমএস-এর নথিতে তাঁর নাম নেই। ইন্টার্নশিপের নথিও দেখাতে পারেননি। ২০১৬ সালে সার্ভিস বুকে এমন অসঙ্গতি রয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট পাঠান কলেজের তৎকালীন প্রিন্সিপাল ইন-চার্জ, চিকিৎসক অখিলেশ খান। যদিও পরের বছর প্রিন্সিপাল হন শ্যামলই!

Advertisement

আবার একই সময়ে বঙ্গবাসী সান্ধ্য কলেজ থেকে বি এসসি এবং ডি এন দে হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিএমএস কী ভাবে ওই অধ্যক্ষ পাশ করলেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। ২০১৩-তে সিসিএইচ রাজ্যের হোমিয়োপ্যাথি কাউন্সিলকে চিঠিতে জানায়, সেখানে নাম নথিভুক্তির জন্য শ্যামলের দেওয়া তথ্য অসম্পূর্ণ। কী বিষয়ে এমডি, তার উল্লেখ নেই। ২০০৪ সালে রাজস্থানের যে কলেজ থেকে এমডি করেছেন বলে জানিয়েছেন, সেটি সিসিএইচ আইন, ১৯৭৩ অনুমোদিত নয়। সার্টিফিকেট প্রদানকারীর পুরো সই নেই। এ দিকে, এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে শ্যামলের কোনও গবেষণাপত্র বেরোয়নি বলে ২০১৭ সালে তথ্য জানার অধিকার আইনে জানিয়েছে ওই সংস্থা।

এক সময়ে প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য থাকলেও এক বছর আগে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে শ্যামলকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি পিডিএ-র সভাপতি, বিধায়ক-চিকিৎসক নির্মল মাজির। তবে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে শ্যামল বলেন, ‘‘কেন পদে আছি, তা সরকারি ব্যাপার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ সব বলা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলব না।’’ স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা (হোমিয়োপ্যাথি) শ্যামল মণ্ডল বলেন, ‘‘কবে কী হয়েছিল, জানা নেই। উনি এক্সটেনশনে, এটুকু জানি।’’ সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরে পদোন্নতি বা পোস্টিং শাসকের দাসত্বের মাপকাঠিতে নির্ভর করে। এখানেও তা-ই হয়েছে।’’ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা, পিজি-র কার্ডিয়োলজির শিক্ষক-চিকিৎসক থেকে হোমিয়োপ্যাথি কলেজের অধ্যক্ষ পদে অবসরপ্রাপ্তদের পুনর্বহালই এখন সরকারি নীতি বলে দাবি অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার। তিনি বলেন, ‘‘বিতর্কিত কাউকে পুনর্বহালের নেপথ্যে উত্তরবঙ্গ লবি নেই তো!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement