—প্রতীকী চিত্র।
শুধু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নয়, অক্সিজেনের জোগানে সমস্যা নিয়ে মাঝেমধ্যে অভিযোগ ওঠে শহরের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, সিলিন্ডারে অক্সিজেন না থাকায় সঙ্কটজনক এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে সেখানে।ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনার সূত্রেই জানা যাচ্ছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অন্য কিছু ওয়ার্ডেও বিক্ষিপ্ত ভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে রোগীর পরিজনদের। অন্যান্য হাসপাতালেও এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করার সময়ে কিংবা কোনও পরীক্ষা বা অস্ত্রোপচারের সময়ে রোগীকে যখন ট্রলিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময়েই সেই সিলিন্ডার ঠিক মতো কাজ করে না।
আবার, শহরের সব হাসপাতালে এখনও কেন্দ্রীয় ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের পাইপলাইন পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তারই প্রমাণ কলকাতা মেডিক্যালের ঘটনা। যে ওয়ার্ডে ওই রোগী ভর্তি ছিলেন, সেখানে তাঁকে সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। অত পুরনো একটি হাসপাতালে এখনও কেন সর্বত্র ওই ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জানা যাচ্ছে, কলকাতা মেডিক্যালের গ্রিন বিল্ডিংয়ের সামনে অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে এখনও সর্বত্র পাইপলাইন নিয়ে যাওয়ার কাজ শেষ হয়নি। প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ এখনও বাকি। যার মধ্যে জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড-ও রয়েছে। সেখানেই ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে ভর্তি ছিলেন বনগাঁর বৃদ্ধ, যাঁর পরিবার ফাঁকা সিলিন্ডারের অভিযোগ করেছে।
অন্যান্য রোগীর পরিজনদের প্রশ্ন, জরুরি বিভাগে আসা সঙ্কটজনক রোগীদের অনেকেরই অক্সিজেন লাগে। সেখানে কী ভাবে এখনও পুরনো দিনের মতো সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে? একই ভাবে, শহরের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত ওয়ার্ডেও এমজিপিএস (মেডিক্যাল গ্যাস পাইপলাইন সার্ভিস) পরিষেবা চালু হয়নি বলে অভিযোগ। এন আর এস বা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ছোট কিছু ওয়ার্ডে এখনও সিলিন্ডারই ভরসা। যদিও এন আর এস কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের পাঁচ শতাংশের মতো কাজ বাকি। আবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে কোভিডের সময়ে যে হাইব্রিড এইচডিইউ চালু হয়েছিল, তার সবটা জুড়ে পাইপলাইন হয়নি। কর্তৃপক্ষের দাবি, এইচডিইউ-র অর্ধেক অংশ এখন ব্যবহৃত হয়।
কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় যে টার্সিয়ারি কেয়ার সেন্টার তৈরি হয়েছে, সেখানে এখনও এমজিপিএস চালু নেই। রোগীর পরিজনদের বক্তব্য, অক্সিজেন সিলিন্ডার এনে তা রোগীকে দেওয়ার জন্য কর্মীদের ডাকতেই অনেকটা সময় চলে যায়। সেটি কী অবস্থায় রয়েছে, অনেক সময়েই তা দেখা হয় না। বহু ক্ষেত্রেই একটি সিলিন্ডার এনে দেওয়ার পরেই তা ফের বদলানো হয়। তাঁদের প্রশ্ন, কেন সমস্ত ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ চালু হবে না? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক বলেন, ‘‘দিনকয়েক আগেই এমজিপিএস নিয়ে বৈঠক হয়েছে। কয়েকটি হাসপাতালে সামান্য কিছু কাজ বাকি। শীঘ্রই তা শেষ করা হবে।’’ কিন্তু তত দিন রোগীরা ভোগান্তি পোহাবেন কেন?
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে ‘প্রাণবায়ু’র জোগানে মারাত্মক টান পড়ে। তাই তৃতীয় ঢেউয়ে নড়ে বসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সমস্ত
রাজ্যের সব স্তরের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন জোগান দিতে এলএমও (লিকুইড মেডিক্যাল অক্সিজেন) ট্যাঙ্ক এবং পিএসএ অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়। সেগুলির মাধ্যমে সমস্ত ওয়ার্ডে এমজিপিএস চালুতে জোর দেওয়া হয়।
আগে হাসপাতালগুলির বেশ কিছু ওয়ার্ডে মূলত ‘ম্যানিফোল্ড অক্সিজেন সার্ভিস’ চালু ছিল। অর্থাৎ, একটি ঘরে বড় কিছু সিলিন্ডার বসানো থাকে। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে ওয়ার্ডে শয্যার সামনে অক্সিজেন যায়। কোভিডের সময় থেকে আরও উন্নত ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা এখনও পুরোমাত্রায় চালু না হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি অব্যাহত।