পুজো কমিটিগুলি কি আদৌ সরকারি ছাড়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে? —ফাইল চিত্র।
পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুদানের অঙ্ক বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুতের বিলে ছাড়ের ঘোষণাও করেছেন। বার বার অর্থসঙ্কটের দাবি করা রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে ফের সমালোচনা শুরু হয়েছে। সরকারি কোষাগারে চাপ দিয়ে এত ছাড় দেওয়াটা আদৌ যুক্তিসঙ্গত কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পুজোয় বিদ্যুতের বিলেই বা এত বিপুল পরিমাণ ছাড় কেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
এমনিতেই শহরের একাধিক বড় পুজোয় মহালয়া থেকেই উৎসব শুরু হয়ে যায়। ফলে প্রতি বছরই তাদের বিদ্যুতের বিলের অঙ্ক হয় লক্ষ টাকারও বেশি। এ বারের সরকারি ঘোষণায় সেই বিদ্যুতের বিলে বড়সড় অঙ্কের ছাড় মিলবে বলে আভাস মিলেছে। কিন্তু যেখানে একাধিক বড় পুজো কমিটির বাজেট লক্ষ লক্ষ টাকা, সেখানে এই ছাড়ের আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কি? পুজো কমিটিগুলি কি আদৌ সরকারি ছাড়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে? এই বিতর্কে প্রকাশ্যে মুখে কুলুপ এঁটেছেন শহরের একাধিক পুজো কমিটির কর্তারা। তবে তাঁরা দাবি করছেন, সরকারি অনুদানের টাকা না এলেও পুজোয় জাঁকজমকের অভাব হবে না।
শহরের বড় বাজেটের পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম, দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা সুদীপ্ত কুমার বলেন, ‘‘অনুদান বা চাঁদায় কোনও বড় পুজো হয় না। বরং বড় পুজো করতে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হয় কর্পোরেট সংস্থাগুলির দেওয়া বিজ্ঞাপনের উপরে। সেটা ঠিকঠাক এলেই বাকিটা নিয়ে ভাবতে হয় না। তবে অনুদান পেতে কার না ভাল লাগে! তাই আপত্তির কোনও প্রশ্নই নেই।’’ একই সুর সিংহী পার্ক পুজো কমিটির কর্তা জয়ন্ত গুছাইতের গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর বাজেট প্রতি বছর আলাদা ভাবেই করি। সরকারি অনুদানের টাকা সামাজিক কাজের জন্য রাখা হয়। রক্তদান শিবির বা স্থানীয় পার্কের সৌন্দর্যায়ন সেই কাজেরই অঙ্গ।’’ তবে পুজোয় সরকারি অনুদানের প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন টালা প্রত্যয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা ধ্রুবজ্যোতি বসু শুভ। তিনি বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর সঙ্গে একাধিক মানুষের সারা বছরের রোজগার জড়িয়ে থাকে। সরকারি সাহায্য ছাড়া তাঁদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব নয়। অনুদান বা ছাড়ের টাকা কিন্তু ঘুরপথে তাঁদের কাছেই পৌঁছয়।’’
বড় বাজেটের পুজোয় সরকারি অনুদানের বিষয়ে বিতর্ক এড়িয়ে সেটিকে ‘সম্মান’ হিসাবেই দেখতে চাইছে লেক টাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিং পুজো কমিটি। ওই কমিটির কর্তাদের দাবি, পুজো মণ্ডপে না হলেও সরকারি অনুদানের টাকা খরচ করা হয় নানা সামাজিক কাজে। ওই কমিটির চিফ কোঅর্ডিনেটর দিব্যেন্দু গোস্বামী বলেন, ‘‘সরকার যে সব রকম ভাবে উৎসাহ দিচ্ছে, তারই অঙ্গ হিসাবে এই ছাড় বা অনুদানকে দেখা উচিত। প্রশাসনিক সহযোগিতা থাকলে অনেক কাজই খোলা মনে করা যায়।’’
একই মত পোষণ করেন দক্ষিণের সুরুচি সঙ্ঘের অন্যতম উদ্যোক্তা কিংশুক মিত্রও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সরকারি অনুদান বা ছাড় আমাদের বিভিন্ন সামাজিক কাজ করতে আরও উৎসাহ দেয়। সেটাই আমরা করে থাকি।’’
তবে সরকারি অনুদান নিয়ে ভিন্ন মনোভাবও রয়েছে। পুজো কমিটির একাংশ একে ‘উপরি পাওনা’ হিসাবেই দেখছেন। উত্তরের একটি পুজো কমিটির এক কর্তা সরাসরি জানাচ্ছেন, পুজোয় অনুদান সরকারি অর্থের অপচয় মাত্র! তাঁর কথায়, ‘‘অনুদান ছাড়া আগেও জাঁকজমক করেই পুজো হয়েছে। এটা সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।’’