New Town Zoo

ধুলোময় পরিবেশে বাঁচছে পশুরা, প্রশ্নে নিউ টাউনের চিড়িয়াখানা

ইকো পার্কের পিছন দিকে গড়ে উঠেছে ‘হরিণালয়’ নামে ওই চিড়িয়াখানা। আগে সেখানে শুধুই হরিণ রাখা হত। কিন্তু এখন জিরাফ, ‌জ়েব্রা, জলহস্তী, কুমির ও নানা ধরনের পাখি নিয়ে আসা হয়েছে।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৮
Share:

ধূসরিত: নিউ টাউনে হরিণালয়ের সামনে পড়ে আছে বালি। বুধবার।  ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

জোরে হাওয়া দিলে কয়েক বিঘার ধু ধু মাঠে ধুলোর ঝড় ওঠে। সেই ধুলোয় কোথাও কোথাও গাছের সবুজ পাতাও ধূসর হয়ে গিয়েছে। ধুলো উড়ে যায় চিড়িয়াখানার ভিতরেও। সেই ধুলো থেকে জীবজন্তুদের রেহাই দিতে অতিরিক্ত জলও ছড়ানো হয়। এমনই পরিস্থিতি নিউ টাউনের সদ্য চালু হওয়া চিড়িয়াখানায়। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে শুরু হয়েছে চর্চা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, অবোলা পশুদের এ ভাবে ধুলোর মধ্যে এনে ফেলা হল কেন?

Advertisement

বিশ্ব বাংলা সরণির অদূরে, ইকো পার্কের পিছন দিকে গড়ে উঠেছে ‘হরিণালয়’ নামে ওই চিড়িয়াখানা। আগে সেখানে শুধুই হরিণ রাখা হত। কিন্তু এখন জিরাফ, ‌জ়েব্রা, জলহস্তী, কুমির ও নানা ধরনের পাখি নিয়ে আসা হয়েছে। সেই সব বন্যপ্রাণী দেখতে দর্শকদের যাতায়াতও শুরু হয়েছে হরিণালয়ে। কয়েক মাসের মধ্যে বাঘ-সিংহেরও আসার কথা। তাদের থাকার জায়গা তৈরির কাজও পুরোদমে চলছে।

এ ভাবে পশুপাখিদের কষ্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিশেষজ্ঞেরা। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর মতে, চিড়িয়াখানাটি পুরোপুরি তৈরির পরে প্রাণীগুলিকে সেখানে নিয়ে আসা উচিত ছিল। তিনি বলেন, ‘‘ধুলোবালিতে প্রাণীদেরও সমস্যা হয়। তবে, যে হেতু প্রাণীরা প্রকৃতির কোলে থাকে, তাই তাদের পক্ষে ধুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুব বেশি সমস্যা হয় না। কিন্তু, তার মানে তো এই নয় যে, পশুপাখিদের জোর করে ধুলোর মধ্যে রাখতে হবে।’’

Advertisement

সদ্য তৈরি হওয়া ওই চিড়িয়াখানায় সম্প্রতি পৌঁছে দেখা গেল, প্রচুর দর্শক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পশুপাখিদের খাঁচার সামনে জড়ো হচ্ছেন তাঁরা। সেখানেই নোনা জলের কুমিরের খাঁচার পাশে দেখা গেল, হিমালয়ের কালো ভালুকের আস্তানা তৈরির কাজ চলছে। সেই জায়গায় পড়ে রয়েছে বালি, সিমেন্ট-সহ নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী। নির্মাণের কাজ চলছে আরও দু’একটি জায়গায়। জোরে হাওয়া দিলে সেই বালি কিংবা নির্মাণ সামগ্রী যে চিড়িয়াখানা চত্বরেই বাতাসে উড়বে, তা বিলক্ষণ জানেন সেখানকার কর্মীরা। তাঁরা জানান, ধুলোবালির সমস্যা এড়াতে দিনের বিভিন্ন সময়ে মাটি জল দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হয়।

চিড়িয়াখানার বাইরের পরিবেশ ভয়াবহ। ধুলোর চাদরে ঢেকেছে রাস্তার ধারের গাছপালা। চিড়িয়াখানায় কর্তব্যরত আধিকারিকদের অফিসের আশপাশের গাছপালাও ধুলোয় ধূসর হয়ে রয়েছে। নিউ টাউনের বাসিন্দাদের কয়েক জন সমাজমাধ্যমে দাবি করেছেন, এই ধুলোর অন্যতম উৎস নির্মীয়মাণ বিভিন্ন বহুতল আবাসন এবং নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্প। পাশাপাশি রয়েছেহরিণালয়ের অদূরেই বিঘার পর বিঘা খালি জমি। তাঁদের মতে, অদূরে বিমানবন্দর থাকায় বিমান ওঠানামার শব্দেও পশুপাখিদের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে।

এই ধুলো থেকে শহরকে বাঁচাতে দিনের বিভিন্ন সময়ে রাস্তা ঝাঁট দেওয়ার গাড়ি ঘোরে নিউ টাউনে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক সুমিত হোমচৌধুরীর কথায়, ‘‘ধুলোবালি থেকে তো সকলেরই সমস্যা হয়। প্রাণীদেরও হওয়ার কথা। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের আর একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’’

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার রেঞ্জার বিবেক ওঝা জানান, ধুলো ঠেকাতে প্রচুর জল দেওয়া হয় চিড়িয়াখানা চত্বরে। তিনি বলেন, ‘‘ইকো পার্কে বিয়েবাড়ির শব্দ ও লেজ়ার আলোয় প্রাণীদের সমস্যা হচ্ছিল। এনকেডিএ-র সঙ্গে কথা বলে সেগুলি বন্ধ করা গিয়েছে। বাইরের ধুলো ঠেকানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে ভিতরে প্রচুর জল দেওয়া হয়, যাতে ধুলো না ওড়ে। নির্মাণের যে কাজ ভিতরে চলছে, সেখান থেকে ধুলো যাতে প্রাণীদের খাঁচায় না যায়, তার জন্য ওই সব এলাকা ঢেকে রাখা হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement