বিধিভঙ্গ: সময় মেনে না চলার পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলারও অভিযোগ উঠছে লরির বিরুদ্ধে। নিজস্ব চিত্র।
মালবাহী গাড়ি চলাচলের সময়ের বিধি রয়েছে। তা প্রয়োগের জন্য উপরতলার কড়া নির্দেশও আছে। কিন্তু সেই নির্দেশ উড়িয়ে বিধির তোয়াক্কা না করেই শহরের রাস্তায় ছুটছে মালবাহী ছোট ও বড় লরি। নিচুতলার পাশাপাশি একাধিক ট্র্যাফিক গার্ডের একাংশের মদতেই মালবাহী গাড়ির লাগামহীন দৌরাত্ম্য দিনের পর দিন বাড়ছে বলে অভিযোগ। ফলে দিনের ব্যস্ত সময়ে যেমন যানজট বাড়ছে, তেমনই ঘটছে দুর্ঘটনাও।
লালবাজার জানাচ্ছে, শহরের রাস্তায় মালবাহী গাড়ি চলাচলের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৪টেথেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শহরে ছোট মালবাহী গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। বড় লরির ক্ষেত্রে এই বিধি সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বলবৎ থাকে। বন্দর এলাকায় কিছু ছাড় থাকলেও শহরের বাকি রাস্তায় কড়া হাতে এই বিধি মানার নির্দেশ রয়েছে লালবাজারের। তবে আপৎকালীন এবং জরুরি ভিত্তিক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মালবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে সময়ের ছাড় রয়েছে।
যদিও বহু রাস্তায় এই নিয়ম মানা হয় না বলেই অভিযোগ। কোথাও নিচুতলার পুলিশের মদতে, কোথাও ‘মাসোহারা’র বিনিময়ে দেদার নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখানো চলছে বলে পুলিশের একাংশ এবং জনগণের অভিযোগ। দিনভর পাথর এবং অথবা অন্যান্য সামগ্রী বোঝাই করে বড় লরি ছোটে। এমনকি, রাস্তা আটকে দেদার মাল ওঠানো-নামানো চলছে বলেও অভিযোগ। ডায়মন্ড হারবার রোড থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, মহাত্মা গান্ধী রোড, মানিকতলা রোড, বেলেঘাটা রোড-সহ উত্তর ও দক্ষিণের একাধিক রাস্তায় ঘুরলেই দেখা মিলছে নিয়ম ভাঙার এই ছবি। ফলে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা এবং যানজটে বাড়ছে ভোগান্তি।
লালবাজারের তথ্য বলছে, মালবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে পথের বিধি প্রথম বার ভাঙলে নির্দিষ্ট ধারায় মামলার পাশাপাশি ২০০০ টাকা জরিমানা করা যায়। তিন বছরের মধ্যে ফের এই বিধি ভাঙলে জরিমানা বেড়ে হয় পাঁচ হাজার। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে তা না মানায় পথের ঝুঁকি বাড়ছে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক নিচুতলার কর্মীর কথায়, ‘‘যেখানে পুলিশের নজর এড়িয়ে মাছি গলতে পারে না, সেখানে ‘নো এন্ট্রি’ অথবা অন্যান্য বিধি থাকা সত্ত্বেও একের পর এক লরি রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে! কারও মদত না থাকলে এটা হতে পারে না! ট্র্যাফিক গার্ডগুলির একটা অংশ সব দেখেও না দেখার ভাব করে থাকে।’’
একই অভিযোগ পথচারী এবং চালকদের। বেহালার বাসিন্দা সুখেন্দু ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘নিয়ম ভাঙাটাই এখন দস্তুর। আইনকানুন সব খাতায়কলমে।’’ তবুওকলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘পথনিরাপত্তাকে সব সময়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। বিধিভঙ্গ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদি কোথাও কোনও মদতে বিধিভঙ্গ হয়ে থাকে, তার প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’