দুপুর থেকেই শহরের বাজারগুলিতে কার্যত ‘মাছি তাড়াতে’ দেখা গেল বহু বিক্রেতাকে। ফাইল ছবি
গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে এমনিতেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল পুজোর বাজার ঘিরে। মঙ্গলবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল রাজনৈতিক কর্মসূচির জেরে পথে বেরিয়ে বিপদে পড়ার ভয়! এই দুইয়ের কারণে এ দিন দুপুর থেকেই শহরের বাজারগুলিতে কার্যত ‘মাছি তাড়াতে’ দেখা গেল বহু বিক্রেতাকে। সন্ধ্যার পরে কিছুটা বিকিকিনি হলেও মন ভরল না তাঁদের। হাতিবাগান বাজারের এক হকারের মন্তব্য, ‘‘পুজোর বাকি আর ১৮ দিন। রবিবার আর মাত্র দুটো। এই সময়ে নাওয়া-খাওয়ার ঠিক থাকে না। এ দিন শুধু খেলামই না, দোকানে বসে ঝিমোলামও!’’
এ দিন বিজেপির কর্মসূচির প্রভাব সব চেয়ে বেশি পড়ার আশঙ্কা ছিল উত্তর ও মধ্য কলকাতার বাজারগুলিতে। কারণ, পুলিশের তরফে সোমবারই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বন্ধ থাকবে কলেজ স্ট্রিট ও মহাত্মা গান্ধী রোড। দেখা গেল, বিকেল চারটেতেও খোলেনি কলেজ স্ট্রিট মোড়ের বেশ কয়েকটি দোকান। প্রায় ক্রেতাশূন্য শাড়ির দোকানগুলি। খোলেনি ‘বর্ণপরিচয়’-এর একাধিক দোকানও। বিকেলের পরে কিছু ক্রেতা এলেও অধিকাংশ বিক্রেতাই গালে হাত দিয়ে বসে ছিলেন। নিমাই ঘোষ নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘‘যাঁরা দোকান খুলেছেন, তাঁরা আজ বিদ্যুতের খরচটুকুও তুলতে পারবেন কি না, সন্দেহ। বহু দোকানের বিকেল পর্যন্ত বউনিই হয়নি।’’ শাড়ির দোকানের বিজ্ঞাপনী টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি আবার বললেন, ‘‘অন্য দোকানের ক্রেতাকে নিজেদের দোকানে নিয়ে যাওয়াটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। অন্য দিন বিকেল না গড়াতেই গলা ভেঙে যায়। আজ খদ্দের এতই কম যে, চেঁচাতেই হয়নি। গানও গাইতে পারি।’’
প্রায় একই অবস্থা ছিল হাতিবাগানের। ওই বাজারের মাঝের যে রাস্তা দিয়ে এই সময়ে গাড়ি নিয়ে যেতে ভয় পান চালকেরা, সেখান দিয়ে এ দিন দ্রুত গতিতেই চলল গাড়ি। এক দোকানি রাজীব সাহা বললেন, ‘‘যেন অর্ধদিবস ধর্মঘট। কেনাকাটার লোকই নেই। এমন আরও কয়েকটি রাজনৈতিক কর্মসূচি হলে আর দেখতে হবে না। হকারেরা না খেতে পেয়ে মরবে।’’ আর এক ব্যবসায়ীর মন্তব্য, ‘‘এই ক’দিন যা প্রচার হয়েছে, মনে হচ্ছিল, শহরে যেন এ দিন যুদ্ধ লাগার কথা। সেই প্রচার শুনেই দক্ষিণ কলকাতা ও হাওড়ার প্রায় কোনও ক্রেতাই এ দিন আসেননি। অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন, মহাত্মা গান্ধী রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ পার করাই যাবে না।’’ সন্ধ্যার পরে কিছু ক্রেতা দেখে ওই বাজারেরই ব্যবসায়ী সুব্রত সেন বললেন, ‘‘বিক্রির জন্য যা পোশাক তুলেছিলাম, তার অর্ধেকও বিক্রি হয়নি। এ বার সেলের বোর্ড টাঙিয়ে বেচতে হবে মনে হচ্ছে।’’
প্রভাব পড়েছিল ধর্মতলা বাজারেও। সেখানেও বিকেল পর্যন্ত ক্রেতার সংখ্যা ছিল অনেক কম। ভিন্ন চিত্র শুধু গড়িয়াহাটে। সেখানে এ দিনও ক্রেতাদের দেখা গিয়েছে অন্য দিনের মতোই। ধর্মতলায় কেনাকাটা করতে যাওয়া, বাগুইআটির সুমিত্রা ঘোষাল বললেন, ‘‘যা হয় দেখা যাবে, ভেবে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়েই আটকে থাকি।’’