প্রতীকী ছবি
আদালতের নির্দেশ ছিল, অনুদান খরচ করতে হবে করোনা-বিধি মানার কাজে। মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার কিনে কী ভাবে টাকা খরচ হল, তার বিলও দিতে হবে। সেই মতো পুজো কমিটিগুলির কাছে বিলও চেয়েছিল থানাগুলি। কিন্তু পর্যাপ্ত বিল জমা পড়েছিল কি? চলতি বছরের দুর্গোৎসবে ৩৬ হাজার পুজো কমিটিকে ফের ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণার পরেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, কিছু পুজো কমিটি বিল দিলেও পর্যাপ্ত বিল দিতে পারেনি, এমন ক্লাবের সংখ্যাও যথেষ্ট। এমনকি, মিলেছে একাধিক ‘গোঁজামিলও’!
করোনা পরিস্থিতিতে অনটনের যুক্তিতে গত বারই প্রথম রাজ্যের প্রায় ৩৬ হাজার দুর্গাপুজো কমিটিকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। যার মধ্যে রয়েছে শহরের প্রায় ২৫০০ পুজো কমিটিও। তা ছাড়াও, মকুব করা হয় দমকল, পুর প্রশাসন বা পঞ্চায়েতের ফি-ও। ঘোষণা হয়, সিইএসসি এবং রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম পুজোর বিদ্যুতের ফি-এর ৫০ শতাংশ মকুব করবে। এর পরই জনগণের টাকায় অনুদান দেওয়া এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। আদালত ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি পুজো কমিটিগুলিকে বলে, অনুদানের টাকা কোভিড-বিধি পালনের কাজে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার কেনায় খরচ করতে হবে। কোন খাতে টাকা খরচ হয়েছে, তা পুজোর পরে আদালতে জানাতেও বলা হয়। পুজো কাটতেই থানার তরফে প্রতি এলাকার অনুদান পাওয়া ক্লাবগুলিকে খতিয়ান জমা দিতে বলা হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সদস্য প্রায় ৫০০টি ক্লাব মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার কেনার বিল জমা করেছে। তবে এর বাইরের বহু পুজো কমিটির বিলে দেখা গিয়েছে, এলাকার ব্যবসায়ীদের স্বাক্ষর। মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারে এমন ভাবে খরচের বিন্যাস দেখানো হয়েছে যা বহু ক্ষেত্রেই বাস্তব দামের চেয়ে বেশি। এ নিয়ে পুজোকর্তাদের থেকে অবশ্য থানার তরফে কোনও রকম ব্যাখ্যা তলব করা হয়নি বলে খবর। যারা বিল দিতে পারেনি, তাদের কাছে চলতি বছরের অনুদানের ঘোষণার আগে পর্যন্ত কোনও রকম কারণ জানতে চাওয়া হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনের অধীন বলে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি কোনও পুলিশকর্তাও।
বিল দিতে না পারা প্রসঙ্গে এক পুজোকর্তার মন্তব্য, “কেন পারেনি জানি না। আজকের দিনে ৫০ হাজার টাকার বিল বানিয়ে নেওয়া কঠিন কাজ কি?” ওই পুজোকর্তার দাবি, “সদ্য মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবসা শুরু করেছেন, এলাকার এমন কাউকে পুজোর অনুদান হিসেবে বিল বানিয়ে দিতে বললেই হয়ে যায়! যে এলাকায় হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে বিল পাওয়া আরও সহজ। কেউই পুজো উদ্যোক্তাদের ঘাঁটাতে চান না।”
এই ঘাঁটাতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে দক্ষিণ কলকাতার নামকরা এক পুজোকর্তার বক্তব্য, ‘‘শহরের বড় ক্লাবগুলি যে পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট নেতা-দাদাকে ধরে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছে, ঠিক সে ভাবেই এগিয়েছে বহু অনামী পুজোকমিটিও। নেতা-দাদারা সঙ্গে থাকায় পরে হিসেব দেওয়ারও প্রয়োজন পড়েনি। এর আরও একটা বড় কারণ, উৎসবের খরচ নিয়ে কড়াকড়িতে নারাজ রাজ্য সরকার।’’
কিন্তু যারা আগের বিল জমা করেনি তাদের কী হবে? এ বারও কি তারা অনুদান পাবে? এ প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। প্রশাসনের একাংশের মতে, শারদোৎসবের আবেগের সঙ্গে অর্থনীতিও যুক্ত। কোভিড পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেও পুজোয় উৎসাহ জরুরি। ফলে এই মুহূর্তে চুলচেরা হিসেবের পক্ষে নয় সরকার। ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা উত্তর কলকাতার এক পুজোর কর্তা শাশ্বত বসুও বললেন, “৫০ হাজার টাকা এই মুহূর্তে অনেক। বহু ছোট পুজো এই টাকা পেলে উপকৃত হয়। সরকারের তরফে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাতেই হয়। অর্থনীতিতে পুজোর প্রভাব মাথায় রাখলেই আর হিসেবের প্রয়োজন হবে না।”