Durga Puja 2023

মামলার ভয়ে পুজো অনুদান নিয়ে তৎপরতা

পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের বৈঠক শেষ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতা পুলিশকে জানানো হয়, তাদের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। যা তারা অনুদানের কাজে ব্যবহার করতে পারবে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ০৬:২৫
Share:

পুজো কমিটি-পিছু ৭০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়ার ঘোষণা হয়েছে। —ফাইল চিত্র।

পুজো কমিটি-পিছু ৭০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়ার ঘোষণা হতে না হতেই পাড়ায় পাড়ায় তৎপরতা তুঙ্গে। কোথাও এলাকার আটটি ক্লাবের মাথা এক জনই! কোথাও একটি পুজো কমিটিতে যিনি সভাপতি, অন্য কমিটিতে তিনিই সম্পাদক বা কোষাধ্যক্ষ। কোথাও আবার পৃষ্ঠপোষক হিসাবে এক জন ব্যক্তি যতগুলি পুজো কমিটির সঙ্গে জড়িত, ততগুলিতে যুক্ত থাকার নজির নেই এলাকার বিধায়কেরও! প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁদের কার্যত কী হয়, কী হয় মনোভাব। তাঁরা এক রকম ধরেই নিচ্ছেন, এ বারও অনুদানের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াবে। প্রকাশ্যেই তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘সমস্ত ক্লাবকে আমিই টাকা পাইয়ে দেব, তা হলে অন্য লোককে পদ দেব কেন! দায়িত্ব আমারই। আদালত শর্ত দেওয়ার আগে সব কাজ সেরে রাখতে হবে!’’

Advertisement

একই তৎপরতা যেন প্রশাসনিক স্তরেও। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের বৈঠক শেষ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতা পুলিশকে জানানো হয়, তাদের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। যা তারা অনুদানের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। রাজ্য পুলিশের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২২০ কোটি টাকা। গত বছরের হিসাবে, রাজ্যে ৪০ হাজার ২৮টি দুর্গাপুজো কমিটি অনুদান পেয়েছে। এর মধ্যে কলকাতা পুলিশ এলাকায় রয়েছে তিন হাজার এবং রাজ্য পুলিশের অন্তর্গত জেলা ও কমিশনারেট মিলিয়ে ৩৭ হাজার ২৮টি পুজো। এ ছাড়া, সরাসরি পুজো কমিটিকে অনুদান পৌঁছতে আপাতত ২৬০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রায় ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করতে চাওয়া হচ্ছে।

কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, ‘‘কিছু আরশোলা বসে আছে। জনস্বার্থ মামলা (পিআইএল) করবে হয়তো!’’ তাই মামলা হয়ে শুনানির দিন ধার্য হওয়ার আগেই কাজ অনেকটা এগিয়ে ফেলতে চায় প্রশাসন। ওই পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর অনুদান বিষয়ক জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টে। ঘটনাচক্রে, তার দু’দিন আগেই, অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে দুই শীর্ষ পুলিশ আধিকারিককে পুজোর অনুদানের টাকা পাঠানো হয়ে গিয়েছে জানিয়ে নির্দেশিকা দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে বরাদ্দ এবং বণ্টন শুরু হয়ে যাওয়ায় টাকা ফেরত নেওয়া কষ্টকর, এই যুক্তি দেখানো হয়। সেই সঙ্গেই দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা দেওয়ার কথা তুলে ধরে রাজ্য জানায়, সংবিধানের ৫১ (এ) ধারা অনুযায়ী, হেরিটেজ রক্ষার দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিকের। রাজ্য সরকারের কাছেও প্রত্যাশা থাকে, তারা এগুলির সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করবে।’’ শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ অনুদানের টাকা খরচ সংক্রান্ত শর্ত বেঁধে দেয়। বলা হয়, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এ স্বেচ্ছাসেবক, মহিলাদের দ্বারা সামাজিক উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ-সহ একাধিক খাতে টাকা খরচ করতে হবে।

Advertisement

কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, নির্দেশ মেনে আদৌ খরচ করবে তো পুজো কমিটিগুলি? না কি নজরদারির ফাঁক গলে জাঁকজমকেই খরচ হবে? কোভিডের সময়ে এমন শর্ত বেঁধে দিলেও তা পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। খরচের হিসাবই বা রাখা হবে কী ভাবে, সেই প্রশ্ন ওঠে। নাগরিকদের বড় অংশেরই প্রশ্ন, আদালত কি এ বারও বলে দেবে, কোন খাতে খরচ করতে হবে? কেন তার আগেই সরকারি নির্দেশিকা জারি হবে না?

প্রশাসনের কোনও স্তর থেকেই এ ব্যাপারে স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘প্রশ্ন অনেক থাকে, কিন্তু দুর্গাপুজোর সঙ্গে যে অর্থনীতি জড়িয়ে আছে, তাতে এই অনুদান কতটা কার্যকর, সেটা নতুন করে বোঝাতে হয় না।’’ কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-নগরপাল পদমর্যাদার এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘আদালত যদি কোনও নির্দেশ দেয়, পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশই অনুদানের চেক বণ্টন করবে। কোনও দুর্নীতির অভিযোগ এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কিন্তু কেন অভিযোগ আসার অপেক্ষা করা হবে? কেন আগাম সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ করা হবে না? উত্তর মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement