কাটমানি নেই, তাই কি কোপ পুজোর বাজেটে

দলীয় নেতা-কর্মীদের কাটমানি ফেরত দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিস্তর জলঘোলা চলছে। কুমোরটুলির শিল্পীদের একাংশের মতে, কাটমানির জোগান না থাকায় এ বারের পুজোয় রাজনৈতিক নেতাদের টাকা দেওয়ার পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য ভাবে।

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০২:২৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

নিউ টাউনের একটি পুজো কমিটির কর্তারা এ বছর বায়নার সময়ে ডেকে পাঠিয়েছিলেন কুমোরটুলির এক মৃৎশিল্পীকে। গত বছর প্রায় লাখখানেক টাকায় প্রতিমা বানানো ওই পুজো কমিটির কর্তারা শিল্পীকে সাফ জানিয়ে দেন, এ বার প্রতিমা বানাতে হবে প্রায় অর্ধেক দামে। কারণ, বাজেট কম। সেই শিল্পী বাবু পালের কথায়, ‘‘ওঁদের বারবার বলি, প্রতিমার দাম আর একটু বাড়াতে। কিন্তু ওঁরা কিছুতেই রাজি নন। পুরনো খদ্দেরের কথা ভেবে রাজি হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না!’’

Advertisement

দলীয় নেতা-কর্মীদের কাটমানি ফেরত দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিস্তর জলঘোলা চলছে। কুমোরটুলির শিল্পীদের একাংশের মতে, কাটমানির জোগান না থাকায় এ বারের পুজোয় রাজনৈতিক নেতাদের টাকা দেওয়ার পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। সেই সঙ্গে গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো রয়েছে দেশের অর্থনীতির সঙ্কট। এই দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে একাধিক বড় পুজো কমিটি এ বার বাজেট-সঙ্কটের মুখোমুখি। দায়ে পড়ে বাজেট কমাতে বাধ্য হয়েছেন পুজোকর্তাদের অনেকেই। যার রেশ এসে পড়ছে কুমোরটুলিতে। মৃৎশিল্পীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বায়না করতে এসে কম দামের প্রতিমা তৈরির বরাত দিচ্ছে একের পর এক পুজো কমিটি।

গত বছর পুজোয় ১৫টি প্রতিমা বানিয়েছিলেন মৃৎশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল। তিনি জানাচ্ছেন, এ বার তাঁর তৈরি প্রতিমার সংখ্যা মাত্র আট-ন’টি। প্রতিমা তৈরির খরচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম না পাওয়ায় কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ বিশ্বজিৎ বলছেন, ‘‘দাম কমাতে চাওয়ায় কিছু পুজো কমিটিকে না বলতে বাধ্য হয়েছি। উপকরণ, শ্রমিকের মজুরি সব মিলিয়ে খরচ এতই বেশি যে পড়তায় পোষাচ্ছে না।’’ আর যাঁদের ‘না’ বলার উপায় নেই বা পুরনো খদ্দেরকে চটাতে চান না, তাঁরা কম দামেই প্রতিমা তৈরি করতে রাজি হচ্ছেন। বিপদে পড়েছেন শোলাশিল্পীরাও। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতির সম্পাদক রণজিৎ সরকার জানাচ্ছেন, পুজোর সময়ে উপহার দিতে বা মণ্ডপ সাজাতে শোলা-পাট দিয়ে তৈরি প্রতিমার শো-পিসের চাহিদা এ বার ভীষণ ভাবে কমে গিয়েছে। পাইকারি বিক্রি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। রণজিতের আক্ষেপ, ‘‘কাটমানি না থাকায় পুজো কমিটিগুলির বাজেট কমেছে অনেকটাই। বাজারের অবস্থাও ভাল নয়। বেগতিক দেখে পুজোর আনুষঙ্গিক খরচ কমাতে চাইছে কমিটিগুলি। এর ফল
ভুগছি আমরা।’’

Advertisement

কাটমানি ও অনুদান-প্রসঙ্গ সরাসরি স্বীকার করতে না চাইলেও শহরের একাধিক পুজো কমিটি মেনে নিয়েছে, খরচ নিয়ে রীতিমতো শঙ্কায় রয়েছে তারা। অনেকে আবার ভাবমূর্তি খারাপ হওয়ার ভয়ে সেটুকুও স্বীকার করতে চাইছেন না। কুমোরটুলি সর্বজনীন পুজো কমিটির তরফে দেবাশিস ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘অনেকেই ব্যক্তিগত স্তরে বড় অঙ্কের টাকা পুজোয় অনুদান হিসেবে দিতেন। সেই পরিমাণ এক ধাক্কায় অনেকটা কমেছে। কী ভাবে সেই ঘাটতি মেটাব, সেটাই এখন পাখির চোখ আমাদের।’’ হাতিবাগান নবীন পল্লি পুজো কমিটির তরফে অমিতাভ রায় জানিয়েছেন, স্পনসরশিপের বাজার খারাপ থাকায় এ বছর যথাসম্ভব কম খরচে পুজো করতে হচ্ছে। এমনকি, নমো নমো করে তাঁরা সেরেছেন খুঁটিপুজোও। দক্ষিণ কলকাতার সুরুচি সঙ্ঘের তরফে স্বরূপ বিশ্বাস বলছেন, ‘‘কোনও বড় পুজো অনুদানের উপরে ভিত্তি করে হয় না। তবে বাজার খারাপ থাকায় খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছি। শিল্পী, মণ্ডপসজ্জা সবেতেই কাটছাঁট করতে হচ্ছে।’’ কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ দেবাশিস কুমারের পুজো ত্রিধারা সম্মিলনীর তরফে মুকুল মান্না অবশ্য জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত তাঁরা পুজোর বাজেট নিয়ে চিন্তা করার মতো কিছু দেখছেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement