দুর্ভোগ: বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলনে চাকরিপ্রার্থীরা। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
তীব্র গরমে হলকা এসে লাগত মুখে। পুড়িয়ে দিত গরম বাতাস। ঘামে জবজবে হয়েই বসে থাকতে হত সারা দিন। এখন বর্ষা এসেছে। কিন্তু দুর্ভোগ বিদায় নেয়নি। মেয়ো রোডে বৃষ্টির জমা জলের উপর দিয়ে যখন গাড়ি যাচ্ছে, সেই নোংরা কাদাজল ছিটকে আসছে তাঁদের গায়ে।
গান্ধী মূর্তি ও মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে নিয়োগের দাবিতে চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান-বিক্ষোভ চলছেই। নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, গান্ধী মূর্তির পাদদেশে কেটে গিয়েছে ৮৩৪ দিন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা— সবই কাটছে রাস্তায়। তবে, বর্ষায় দুর্ভোগ হয় সব থেকে বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা নিয়োগের দাবিতে লড়াই থামাবেন না।
নবম থেকে দ্বাদশের এক চাকরিপ্রার্থী অভিষেক সেন বললেন, ‘‘জমা জলের উপর দিয়ে গাড়ি গেলে সেই জল ছিটকে আসছে আমাদের গায়ে। তবে, ভয় বেশি বজ্রপাতের। এখন তো বজ্রপাত বেড়েছে খুব। চার দিকে বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর প্রায়ই শুনি। বজ্রপাত হতে থাকলে প্রাণ হাতে করে বসে থাকতে হয়। আমাদের ধর্না মঞ্চের পাশেই রয়েছে একটি ক্লাব। খুব মেঘ ডাকলে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিই।’’ অভিষেক জানান, আগামী ৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে শুনানি আছে। সে দিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা। চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের ত্রিপল গাছের সঙ্গে বাঁধা রয়েছে। বর্ষায় ত্রিপল হাওয়ায় সামলানো যাচ্ছে না।
মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে বসা চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, ভরা বৃষ্টিতে ত্রিপল সামলাতে হিমশিম অবস্থা হচ্ছে তাঁদের। যখন খুব বৃষ্টি হচ্ছে, তখন ত্রিপল উঁচু করে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী সুশান্ত ঘোষ বললেন, ‘‘তীব্র গরমে কষ্ট পেয়েছি। বর্ষায় আবার অন্য রকম কষ্ট। বৃষ্টিতে ত্রিপল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। না হলে পুরো ভিজে যাচ্ছি। তবে, যতই কষ্ট হোক, নিয়োগের দাবির জন্য যে আন্দোলন, সেখান থেকে সরছি না।’’ উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন সোমবার ২০৬তম দিনে পড়ল।
মূর্তির পাদদেশে বসা অবস্থানকারীদের মধ্যে রাজ্য গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রার্থীদের ৩০৮ দিন, বঞ্চিত প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের ৩০৭ দিন, ইন্টারভিউ-বঞ্চিত উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের ৩৭৫ দিন, স্কুলের গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রার্থীদের ৩০৮ দিন, নতুন করে এসএসসি পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের ১০৮ দিন ধরে ধর্না অবস্থান চলছে। আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, দরিদ্র চাকরিপ্রার্থীরা নিজেদের কষ্টের অর্থ ব্যয় করে আইনি লড়াই ও আন্দোলন চালাচ্ছেন। তীব্র শীত, অসহনীয় গরম বা প্যাচপেচে বর্ষা— সব কিছু সহ্য করেই নিয়োগের আশায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।