NRS

এনআরএস কাণ্ডের জের, রাজ্য জুড়ে সব মেডিক্যাল কলেজেই প্রতীকী কর্মবিরতি, বন্ধ আউটডোর পরিষেবা

হাসপাতালের মেন গেট এমনিতেই বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখান থেকে কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৯ ১৪:০৯
Share:

গতকাল আহত হন এই দুই জুনিয়র ডাক্তার। —নিজস্ব চিত্র।

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হল না নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (এনআরএস)। আউটডোর পরিষেবা বন্ধ রয়েছে সেখানে। একই সঙ্গে রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে প্রতীকী কর্মবিরতির ডাক দেওয়ায় দু’ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে গেল আউটডোর পরিষেবা। এর ফলে হাসপাতালগুলিতে জরুরি পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে।

Advertisement

এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁদের। আটকানো হচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্সও। যে ওয়ার্ডে তাঁদের রোগী ভর্তি রয়েছেন, সেখানেও তাঁদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

হাসপাতালের মেন গেট এমনিতেই বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে শিয়ালদহ উড়ালপুলের দিকেও তালা ঢুলিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই রোগীর পরিবারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। বহুদূর থেকে এসেও চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে তাই সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বহু মানুষ। দুর্গাপুরের বাসিন্দা তারকনাথ সর্দার জানান, ওভারিতে টিউমার নিয়ে সেখানে ভর্তি তাঁর দিদি শতাব্দী মণ্ডল। অথচ তাঁকে দিদির সঙ্গে দেখাই করতে দেওয়া হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট করার কথা থাকলেও, এখনও পর্যন্ত করা হয়নি তা-ও।

Advertisement

আরও পড়ুন: রোগীর আত্মীয়দের হাতে আক্রান্ত, এনআরএস-এ তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ জুনিয়র ডাক্তারদের​

ভাঙড় থেকে এনআরএস-এ এসেছেন হাফিজুল মোল্লা। প্রবল জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি তাঁর স্ত্রী। কিন্তু হাসপাতালে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান তিনি। স্ত্রী আদৌ চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি। মুর্শিদাবাদের আফতাবউদ্দিন আহমেদ জানান, তাঁর দু’বছরের নাতি জিশান আলির পেটের অপারেশন হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁকে। তাই নাতি কেমন আছে জানতে পারছেন না।

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে পৌঁছন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কীভাবে এই সঙ্কট কাটিয়ে বেরিয়ে আসা যায়, তা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে যান তিনি। কিন্তু সেখানে পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে দেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। ‘স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর হাত রক্তে রাঙা’, এমন স্লোগানও দেওয়া হয় তাঁর উদ্দেশে।বৈঠক থেকে বেরিয়ে একবার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করেন চন্দ্রিমা। কিন্তু তাঁকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা শুরু হয়, যার পর ফের বাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। সেখানে যোগ দেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও।

সংবাদমাধ্যমে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমেই চিকিৎসার পরিবেশ গড়ে ওঠে। কোনও ডাক্তারই চান না রোগীর মৃত্যু হোক। হাসপাতালে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তার পরেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা দেখতে হবে। খুবই অনভিপ্রেত ঘটনা।’’ এ দিন নির্মল মাজি হাসপাতালে পৌঁছলে, তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়।

হাসপাতালে বিক্ষোভের মুখে পড়েন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: সাইক্লোন বায়ু এগচ্ছে গুজরাতের দিকে, সতর্ক সেনা

এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র কেরে সোমবার রাতে তেতে ওঠে এনআরএস চত্বর। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ডাক্তারদের উপর চড়াও হয় রোগীর পরিবার, বচসা থেকে যা ক্রমশ হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। পরিস্থিতি চরমে উঠলে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। তাতে পরিবহ মুখোপাধ্যায় এবং যশ নন্দানি নামের দুই জুনিয়র ডাক্তার জখম হন এবং তাঁদের আইসিইউ-তে ভর্তি করতে হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তার পরই হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভে নামেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের অভিযোগ, প্রায়শই এমন ঘটনা ঘটছে। রোগীর মৃত্যু হলেই চিকিৎসকদের মারধর হরা হয়। এ ভাবে চলতে পারে না। অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে, পাশাপাশি তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তার পরই অবস্থান বিক্ষোভ উঠবে বলে জানিয়ে দেন তাঁরা।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement