House on rent

জানা হয় না পরিচয়, নিয়ম উড়িয়ে শহরে চলছে ভাড়াটে-রাজ

বুধবার আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে অপরাধ দমন বৈঠকে শহরে অপরাধ কমাতে ভাড়াটেদের পরিচয়পত্র যাচাইয়ে পুলিশকে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন নগরপাল বিনীত গোয়েল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:২৩
Share:

নথি যাচাই না করে ঘর ভাড়া দেওয়া বারাচ্ছে বিপদ। প্রতীকী চিত্র।

মাসের শেষে ভাড়ার টাকা মিললেই হল। সেই ভাড়ার ঘরে কে আসছেন-যাচ্ছেন, তার হিসাব কার্যত রাখেন না কেউ! জানা থাকে না ভাড়াটের পরিচয়ও। বহু ক্ষেত্রে আবার পুলিশের কাছে জমা দেওয়ার জন্য বাড়ির মালিক ভাড়াটের থেকে তাঁর পরিচয়পত্র চেয়ে নিলেও তা পৌঁছয় না থানা পর্যন্ত।এর পরে শহরে কোনও অপরাধে ভাড়াটে-যোগ মিললে দিনকয়েক কড়াকড়ি চলে, তার পরে আবার যে-কে-সেই! ফলে শহরে রমরমিয়েই চলে ভাড়াটে-রাজ।

Advertisement

বুধবার আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে অপরাধ দমন বৈঠকে শহরে অপরাধ কমাতে ভাড়াটেদের পরিচয়পত্র যাচাইয়ে পুলিশকে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন নগরপাল বিনীত গোয়েল। শহরের যে যে এলাকায় ভাড়াটের সংখ্যা বেশি, সেই এলাকার থানাগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি। যদিও তার পরেও ভাড়াটে-রাজ কমবে কি না, সেই প্রশ্ন থাকছেই।

এর আগে শহরের একাধিক অপরাধের ঘটনার তদন্তে ভাড়াটে-যোগ সামনে এসেছে। দিনের পর দিন ভুয়ো পরিচয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে দুষ্কৃতী বা সন্ত্রাসবাদীরা লুকিয়ে থাকলেও পুলিশের কাছে সে সম্পর্কে কোনও খবরই ছিল না। বছর দেড়েক আগে হরিদেবপুর থানা এলাকায় তিন সন্দেহভাজন জেএমবি জঙ্গি গ্রেফতারির ঘটনায় উঠে এসেছিল এই ভাড়াটে-যোগ। বাংলাদেশ থেকে ভুয়ো পরিচয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে শহরে ঘাঁটি গাড়লেও অন্ধকারে ছিল পুলিশ। এমনকি তাঁরা কী কাজ করেন, সেই খোঁজখবরও নেননি বাড়ির মালিক। জঙ্গি গ্রেফতারির ঘটনায় ভাড়াটে-যোগ সামনে আসায় এর পরে পুলিশকে কড়াকড়ি করতে দেখা যায়। যদিও কিছু দিন পরে ফের ফিরে আসে আগের অবস্থা। সপ্তাহকয়েক আগে হরিদেবপুরে ভাড়া বাড়িতে এক বধূর রহস্য-মৃত্যুতেও বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। কোনও নথি ছাড়াই দালাল মারফত ঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন বাসিন্দারা।

Advertisement

পরিস্থিতি বুঝতে সম্প্রতি যাদবপুর, হরিদেবপুর, উল্টোডাঙা, বাঘা যতীন, বেহালা-সহ শহরের একাধিক জায়গায় বাড়ি ভাড়া চেয়ে খোঁজ নিতে যাওয়া হয়েছিল। দেখা গেল, কার্যত কোথাওই পরিচয়পত্র চাওয়ার কোনও কড়াকড়ি নেই বাড়ির মালিকদের পক্ষ থেকে। দু’-একটি জায়গায় পরিচয়পত্রের কথা বলা হল বটে, তবে হবু ভাড়াটে নিমরাজি থাকলে তা পরে দিলেও চলবে বলেও দায় সারলেন অনেকে। কিন্তু নিয়ম না মানার কথা বলতেই কোনও কোনও বাড়ির মালিক পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘ভাড়াটে চলে গেলে লোকসানের টাকা কে দেবে?’’

নিয়ম বলছে, নতুন কোনও ভাড়াটে এলে তাঁর সচিত্র পরিচত্রপত্রের বৈধ নথি বাড়ির মালিককে থানায় জমা দিতে হবে। সেই নথিতে ভাড়াটের নাম, ফোন নম্বর-সহ স্থায়ী ঠিকানার উল্লেখ থাকতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হয় না বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে আবার বাড়িমালিকদের একাংশ বাড়তি টাকার লোভে, কখনও ভাড়াটে চলে যাওয়ার ভয়ে পরিচয়পত্র নিয়ে কড়াকড়ি না করেই ঘর ভাড়া দিয়ে দেন। এর সঙ্গে পুলিশের একাংশের গা-ছাড়া ভাব পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন করে বলে অভিযোগ। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বাড়ির মালিক সচেতন না হলে পুলিশের পক্ষে ভাড়াটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। কে কখন কোথায় আসছেন, সেই তথ্য বাড়িমালিক না দিলে পুলিশের পক্ষে সব সময় বোঝা সম্ভব নয়।’’ কিন্তু পুলিশি নজরদারি? লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘সারা বছরই প্রতিটি ডিভিশনকে ভাড়াটের ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া থাকে। বাড়ির মালিকদের সতর্ক থাকার কথা বলে নানাবিধ প্রচারও চলে।’’

কিন্তু শুধু প্রচারে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে কি? সেই প্রশ্নের অবশ্য স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement