অভিযোগ জানালেও ‘প্রোমোটিং রাজ’ চলে নিজের নিয়মেই। প্রতীকী ছবি।
অনিয়মই যেন দস্তুর! কখনও নিচু জমি ভরাট করে উঠছে বেআইনি বহুতল, কখনও পুরনো বাড়ি বা জমি দখল করে বেআইনি নির্মাণ। এ ছাড়া বাড়ির মেরামতি থেকে ছোটখাটো নির্মাণ— সবেতেই ‘প্রোমোটার দাপটের’ ছোঁয়া। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে পুরসভাও সেই বেআইনি নির্মাণ ভাঙার সাহস পায় না। ফলে অভিযোগ জানালেও ‘প্রোমোটিং রাজ’ চলে নিজের নিয়মেই।
সম্প্রতি হরিদেবপুরে লক্ষ্মীদেবী সাউ নামে এক মহিলার মৃত্যুতে সামনে এসেছে প্রোমোটার-যোগ। ২৭০ বর্গফুটের জায়গা নিয়ে বিবাদের জেরে ওই মহিলাকে অ্যাসিড খাইয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তদন্তে নেমে এক প্রোমোটার-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত। লক্ষ্মীদেবীর দেহের ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও পেটে অ্যাসিডমিলেছে। তবে চাপে পড়ে তিনি নিজে অ্যাসিড খেয়েছিলেন, না কি তাঁকে জোর করে খাওয়ানো হয়েছিল— তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছেন, যাতে ওই মহিলাকে ভোরে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছে। তবে সেই সময়ে তাঁর হাতে কিছু ছিল না।
তবে এই ঘটনা শহরের বেআইনি নির্মাণ ব্যবসার বাড়বাড়ন্তকে ফের সামনে তুলে এনেছে। প্রশ্ন উঠছে, বার বার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ বা পুরসভা? কেন লাগাম পরানো যায় না প্রোমোটিং চক্রে?
শহরবাসীর একাংশ এর নেপথ্যে রাজনৈতিক মদতকে দায়ী করছেন। হরিদেবপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে যুক্তদের অধিকাংশেরই রাজনৈতিক যোগ রয়েছে। কেউ ‘দাদা’র স্নেহধন্য, ভোটের সময়ে কারও দাপট চলে। কোথাও দাগি আসামি প্রোমোটিংয়ে নাম লিখিয়েছেন। ফলে বহু ক্ষেত্রে প্রোমোটারদের বেআইনি কাজ দেখেও না দেখার ভান করতে হয়।’’
যদিও পুলিশ ও পুরসভা সূত্রের খবর, কয়েক বছরে বেআইনি প্রোমোটিং বেড়েছে তিলজলা, কড়েয়া, তপসিয়া, আনন্দপুর, খিদিরপুর-সহ বন্দরের বিভিন্ন এলাকায়। ইদানীং সেই তালিকায় জুড়েছে হরিদেবপুর ও আশপাশের এলাকার নাম। পুরসভা সূত্রের খবর, শুধু তিলজলা, কড়েয়া এলাকাতেই বেআইনি বাড়ির সংখ্যা প্রায় দু’হাজার! এ নিয়ে ‘টক-টু-মেয়র’ অনুষ্ঠানে একাধিক অভিযোগও এসেছে। প্রোমোটিং-বিবাদ ঘিরে দুষ্কৃতী-তাণ্ডব, এমনকিঅন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মারার মতো ঘটনাও ঘটেছে। দুষ্কৃতী তাণ্ডবে রাশ টানতে একাধিক থানার আধিকারিকদের ডেকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও।
যদিও প্রোমোটিং চক্র নিয়ে কলকাতা পুরসভার এক মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘প্রোমোটিং চক্র বন্ধ করতে প্রতিদিনই পুরসভা বেআইনি নির্মাণ ভাঙছে। পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।’’ লালবাজারের এক পুলিশকর্তার আবার দাবি, ‘‘প্রোমোটিংয়ের জেরে দুষ্কৃতী তাণ্ডব বন্ধ করতে প্রতি ডিভিশনেই নির্দেশ দেওয়া আছে। যে এলাকায় প্রোমোটারদের দাপট বেশি, সেখানকার থানাকেও নির্দেশ দেওয়া আছে। পুরসভার সঙ্গেসমন্বয় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’