গাড়ির গতি আটকানোর ভার কোন যন্ত্রকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে জলঘোলার শেষ নেই। যার জেরে এ রাজ্যে শিকেয় উঠতে বসেছে দুর্ঘটনা রুখতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানার চেষ্টা। থমকে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্পও।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সারা দেশে বাণিজ্যিক গাড়ির গতি বেঁধে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক। সেই মতো গত ১ এপ্রিল থেকে বাজারে যে সব নতুন গাড়ি এসেছে, সে সব গাড়িতেই গতি বেঁধে দেওয়ার যন্ত্র লাগানো হয়। ঠিক ছিল, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সমস্ত পুরনো গাড়িতে ওই যন্ত্র লাগানো হবে। তবে পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিল হওয়ার পরে তার সময়সীমা ফের পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে কোন সংস্থার ‘স্পিড গভর্নর’ গাড়িতে বসানো হবে, তা নিয়ে মালিক ও পরিবহণ দফতরের মধ্যে দ্বন্দ্ব। যার জেরে শিকেয় উঠতে বসেছে গোটা প্রকল্পটাই।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, স্কুলগাড়ির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং বাস ও ট্রাকের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সেই মতো বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজ্য পরিবহণ দফতর। এসএলডি বসিয়ে গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়। তখনই বেঁকে বসেন বেসরকারি বাসের মালিকেরা। তাঁদের দাবি, ওই যন্ত্র বসানো হলে যে ইঞ্জিনের কোনও ক্ষতি হবে না, এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে খোদ পরিবহণ দফতরকেই। কিন্তু সেই দায় সরাসরি নিতে নারাজ পরিবহণ দফতরও।
দফতর সূত্রের খবর, যদিও বাসমালিকদের স্বার্থে ‘ডিভাইস এক্সপার্ট কমিটি’ গঠন করে পরিবহণ দফতর। দফতরের অতিরিক্ত সচিব, এক উচ্চপদস্থ প্রযুক্তিকর্মী, বেসরকারি বাস ও ট্রাকমালিকদের এক জন করে প্রতিনিধি এবং গাড়ি প্রস্তুতকারী সংগঠনের এক কর্মীকে নিয়ে গঠিত হয় ওই কমিটি। মূলত তাদের কাজ ছিল বাজারে বিক্রি হওয়া কিছু যন্ত্র খতিয়ে দেখা। ওই কমিটির বলে দেওয়া যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, আবার না-ও পারে। সেটি বাসমালিকদের উপরেই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গোল বেধেছে সেখানেই।
‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’-এর সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওই কমিটির এক সদস্য। তিনি জানান, ২০১০ সালের পরে উন্নতমানের বিএস-৩ এবং বিএস-৪ বাসের গিয়ার বক্সে থাকা ‘সার্কিট’-এ স্পিড লিমিটিং ডিভাইস লাগানোই রয়েছে। ফলে সেগুলিকে শুধুমাত্র ইঞ্জিনের সঙ্গে সংযোগ করে দিলেই কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু পুরনো গাড়িগুলির গিয়ার বক্সে এ ধরনের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে সেখানে নতুন যন্ত্র বসাতে হবে।
তপনবাবুর অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে নতুন যন্ত্র বসানোর পরে ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এমন কোনও সংস্থার যন্ত্র ব্যবহার করা হোক যাতে পরিবহণ দফতর নিশ্চিত করে বলতে পারবে, ইঞ্জিনের কোনও ক্ষতি হবে না।’’
তিনি জানান, তাঁদেরই প্রায় ৪০ হাজার বাস রয়েছে। যার মধ্যে ৮৫ শতাংশই ২০১০ সালের আগের। মিনিবাস অপারেটার্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি-র তরফে অবশেষ দাঁ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তো মানতেই হবে। তার আগে এই ধোঁয়াশাগুলি কেটে গেলেই ভাল হয়।’’
কিন্তু সেই ধোঁয়াশা কবে এবং কী ভাবে কাটবে, এখন তারই উত্তরের খোঁজ চলছে।