Buddhadeb Bhattacharjee Death

বুদ্ধদেবের দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শেষ এনআরএসে, এর পর কী হবে? কোন গবেষণার কাজে লাগবে?

হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করানোর পরেই শুরু হয় দেহদানের প্রক্রিয়া। প্রয়োজনীয় সরকারি নথিতে সই করেন বুদ্ধদেবের স্ত্রী, সন্তান। তার পরেই শুরু হয় দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৪ ২২:৪৮
Share:

শেষযাত্রায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। — নিজস্ব চিত্র।

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সওয়া ৭টা পর্যন্ত দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া চলে। এর পর একটি প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ। সেখানেই দেহে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। সাত দিন পর দেহ পর্যবেক্ষণ করবেন চিকিৎসকেরা। তার পর আবার ১৪ দিন পর পর্যবেক্ষণ করা হবে। তার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, দেহ কোন গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে। দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু করার আগে সরকারি নথিপত্রে সই করেছেন বুদ্ধদেবের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য এবং সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য।

Advertisement

শুক্রবার বিকেল ৫টা নাগাদ নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছয় বুদ্ধদেবের দেহ। বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁকে বিদায় জানান অগণিত সমর্থক। হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশের পরেই শুরু হয় দেহদানের প্রক্রিয়া। বুদ্ধদেবের স্ত্রী এবং সন্তানের উপস্থিতিতে যাবতীয় সরকারি প্রক্রিয়া মিটে যাওযার পর শুরু হয় দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় দেহের শিরার মধ্যে বিশেষ রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। তাতে থাকে ফর্মালিন। এই প্রক্রিয়াকে বলে ‘এমবামিং’। তার পর বুদ্ধদেবের দেহ একটি প্রকোষ্ঠের মধ্যে রাখা হয়। সেখানে কিছু রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে। সাত দিন পর প্রথমে তাঁর দেহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। ১৪ দিন পর পর্যবেক্ষণ করা হবে আবার। তার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কোন গবেষণার কাজে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ ব্যবহার করা হবে।

এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক তথা অ্যানাটমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার রাজ্য সভাপতি অভিজিৎ ভক্ত জানিয়েছেন, বুদ্ধদেববাবুর মতো ব্যক্তিত্বের দেহদানের ফলে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এনআরএসেও যে আধুনিক প্রক্রিয়ায় দেহ সংরক্ষণ করা হয়, মানুষের কাছে সেই বার্তাও যাবে। তিনি বলেন, ‘‘দেহ কী অবস্থায় রয়েছে, সাত দিন পর দেখা হবে। ১৪ দিন পর আবার দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা কোন গবেষণার জন্য উপযুক্ত।’’ মিশরে এই এমবামিং প্রক্রিয়ায় প্রথম দেহ সংরক্ষণ করে মমি করে রাখা হত। ১৮৩৬ সালে প্রথম বার ভারতে এ ভাবে দেহ সংরক্ষণ শুরু হয়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে মৃত্যু হয় বুদ্ধদেবের। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। রাতে দেহ রাখা ছিল পিস ওয়ার্ল্ডে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বিধানসভার উদ্দেশে শববাহী গাড়িতে রওনা দিয়েছিল বুদ্ধদেবের দেহ। ১১টায় বিধানসভায় প্রবেশ করে সেই শববাহী শকট। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ রাজ্যের নেতা, মন্ত্রীরা। সাড়ে ১১টায় বিধানসভা থেকে রওনা দেয় শববাহী শকট। ‘কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অমর রহে’ স্লোগান ওঠে। দেহ পৌঁছয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতর মুজফ‌্‌ফর আহমেদ ভবনে। সাড়ে ৩টে পর্যন্ত সেখানেই শায়িত ছিল বুদ্ধদেবের দেহ। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে লম্বা লাইন পড়ে দলীয় দফতরের বাইরে। সাড়ে ৩টের সময় দেহ রওনা দেয় সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য দফতর দীনেশ মজুমদার ভবনে। জনস্রোতে ভবনের সামনে কিছু সময় দাঁড়িয়ে ফের ধীর গতিতে চলতে শুরু করে শববাহী শকট। কাতারে কাতারে মানুষ পা মেলান শেষযাত্রায়।

বিকেল ৫টা নাগাদ বুদ্ধদেবের দেহ নিয়ে শববাহী শকট পৌঁছয় এনআরএস হাসপাতালে। সেখানেই তাঁর দেহ দান করা হয়। ২০০৬ সালের মার্চ মাসে দেহদান করার অঙ্গীকারপত্রে সই করেছিলেন বুদ্ধদেব। সেই অঙ্গীকারপত্রে সাক্ষী হিসাবে সই ছিল নিরুপম সেন এবং মদন ঘোষের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement