ফাইল চিত্র।
নমুনা সংরক্ষণ করা নিয়ে সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছিল। যার ভিত্তিতে কারণ দেখাতে বলে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে আর জি করে দিনকয়েক বন্ধও ছিল এফএনএসি নমুনা সংগ্রহ। নির্দিষ্ট শর্তে ফের তা শুরু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু নমুনা সংরক্ষণ নিয়ে অভিযোগ যে সব সমস্যার কারণে, তার এখনও সমাধান সূত্র মিলল না বলেই দাবি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি অংশের। রোগীর পরিজনেরাও জানাচ্ছেন, কিছুটা কমলেও সমস্যা কিন্তু রয়েই গিয়েছে।
সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এক রোগীর পরিজনের অভিযোগ ছিল, এফএনএসি পরীক্ষার জন্য সংগৃহীত নমুনা কেন রোগীকে তাঁর বাড়ির ফ্রিজ়ে রাখতে বলা হবে? সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের অন্দরের দাবি, রোগীকে তাঁর দায়িত্বে নমুনা রাখতে বলার নেপথ্যে রয়েছে অন্য কাহিনি।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, বেসরকারি সংস্থাকে বরাত দিয়ে বিনামূল্যে এফএনএসি-র নমুনা পরীক্ষা হত। কিন্তু সংস্থার কাছে ওই নমুনা জমা দেওয়ার সময়সীমা দুপুর ২টো। সময়ের এই গেরোয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল পরিষেবা। কারণ, রোগীর শরীর থেকে এফএনএসি নমুনা সংগ্রহ করেন চিকিৎসকেরা। বহির্বিভাগ এবং অন্তর্বিভাগের দায়িত্ব সামলে দিনের দ্বিতীয়ার্ধে তাঁরা ওই কাজ করেন। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নমুনা জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যায়। ফলে পরের দিন দুপুর ২টোর মধ্যে আগের দিনের সংগৃহীত নমুনা নির্দিষ্ট স্থানে জমা দিতে হয় রোগীর পরিবারকে। কিন্তু এত ঘণ্টা নমুনা থাকবে কোথায়? হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীর অস্বাভাবিক চাপে বিভাগের ফ্রিজ়ে জায়গা থাকে না। তাই সেটি বাড়ি নিয়ে যেতে অনুরোধ করা হত রোগীকে।
এ দিকে অভিযোগ সামনে আসতেই স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত তা পৌঁছয়। এর কারণ দেখাতে বলে দিনকয়েকের জন্য এফএনএসি বন্ধও হয়ে যায় আর জি করে। সমস্যার সমাধানে কিছু দিন আগেই স্বাস্থ্য ভবন থেকে এসেছে নতুন নির্দেশ। আগের সংস্থার থেকে দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে এফএনএসি পরীক্ষার ভার দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের উপরে। সেখানে বিকেল ৪টে পর্যন্ত জমা নেওয়া হবে নমুনা।
তবুও অনেকের নমুনা সময়ের মধ্যে জমা পড়ছে না বলে দাবি। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, নমুনা হাতে ধরিয়ে তা মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে জমা দেওয়ার কথা বলেই ক্ষান্ত হচ্ছেন সিটি স্ক্যান বিভাগের কর্মীরা। এঁরা মূলত এই নমুনা সংগ্রহের জন্য নাম নথিভুক্ত করেন। আরও অভিযোগ, কোথায় সেই বিভাগ, শেষ মুহূর্তে তা বুঝতে না পেরে অনেক পরিজনই সংগৃহীত নমুনা সময়ে জমা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অলিখিত সম্মতিতে তাঁরা ওই নমুনা বাড়ি নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
তবে বাস্তব হল, দুপুর ২টোর মধ্যে এফএনএসি নমুনা জমা নেওয়া হয় প্রায় সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই। অন্যত্র এ নিয়ে অভিযোগ না হওয়ায় বিষয়টি সামনে আসেনি। ব্যতিক্রম এসএসকেএম হাসপাতাল। গত বছরই সেখান থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন চিকিৎসক অন্তরীপ হালদার। তিনি বলছেন, ‘‘এখানে এফএনএসি নমুনা হাসপাতালেরই প্যাথোলজি বিভাগ সংগ্রহ করে। ভর্তি রোগীকে গ্রুপ-ডি স্টাফ পূর্বনির্ধারিত সময়ে ওই বিভাগে নিয়ে যান। সেখানেই সেটি সংগ্রহ করে জমা করে নেওয়া হয়। ফলে রোগীর পরিজনকে নমুনা জমা করা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না।’’
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এফএনএসি নিয়ে আর জি করের রোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। এর পরেও সমস্যা থাকলে বিভাগীয় প্রধান এবং কর্তৃপক্ষ বসে বিষয়টি আলোচনা করে সমাধান করতে পারেন। কারণ রোগীর বাড়ির ফ্রিজ়ে কোনও নমুনা রাখাই কাম্য নয়।