—প্রতীকী চিত্র।
রাজারহাট-নিউ টাউনের পাথরঘাটায় নির্মাণ-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের প্লান্ট গড়েছে কলকাতা পুরসভা। মাস চারেক আগেই সেটির উদ্বোধন করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। দৈনিক ৫০০ টন নির্মাণ-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার ক্ষমতা রয়েছে ওই প্লান্টের। অথচ বেশির ভাগ দিনই পর্যাপ্ত বর্জ্য সেখানে পৌঁছচ্ছে না। কোনও কোনও দিন এক টন নির্মাণ-বর্জ্যও না পৌঁছনোয় প্লান্ট বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
প্লান্ট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে দরপত্রের মাধ্যমে হায়দরাবাদের এক বেসরকারি সংস্থাকে বেছেছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভার থেকে টনপিছু ৩৬৯ টাকা পাওয়ার কথা ওই সংস্থার। হিসাব মতো পুরসভা সংস্থাকে বছরে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা দেবে।
অথচ দৈনিক উৎপাদিত নির্মাণ-বর্জ্যের নিরিখে চেন্নাই ও মুম্বইয়ের পরেই কলকাতা। জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায় ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সমীক্ষা অনুযায়ী, শহরের দূষণ ঠেকাতে ওই কারখানা তৈরি হয়েছে। তা হলে এত নির্মাণ-বর্জ্য যাচ্ছে কোথায়?
পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, নির্মাণ-বর্জ্য সরানোর জন্য পুরসভায় একটা নির্দিষ্ট টাকা জমা দেন আবর্জনার উৎপাদক। অথচ বাইরের লোককে বর্জ্য দিলে তার বিনিময়ে টাকা পান তিনি। পুরসভাকে বর্জ্য তুলতে দিতে এখানেই জনগণের অনীহা। যে কারণে পুরসভার আট নম্বর বরোয় একটি বাড়ির নির্মাণ-বর্জ্য তুলতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সম্প্রতি কর্মী পাঠালেও তাঁদের খালি হাতে ফিরতে হয়। কারণ, উৎপাদক তা বিক্রি করার কথাই জানিয়ে দেন ওই কর্মীদের।
কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডের নির্মাণ-বর্জ্য রাজারহাটের প্লান্টে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব বিল্ডিং দফতর ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতরের। পুরসভা সূত্রের খবর, বাড়ি ভাঙলে সেখানকার নির্মাণ-বর্জ্য সরিয়ে ফেলতে প্রথমে বিল্ডিং দফতরের তরফে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতরকে জানানো হবে। এর পরে ওই দফতরের কর্মীরা সেই নির্মাণ-বর্জ্য তুলে প্লান্টে পৌঁছে দেবেন। অভিযোগ, বিল্ডিং দফতরের থেকে নিয়মিত ‘সাড়া’ না পাওয়ায় শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়ি ভাঙা হলেও সেই বর্জ্য প্লান্টে পৌঁছচ্ছে না। জানা যাচ্ছে, এই কাজের জন্য বিল্ডিং দফতরের কাছে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতরের আধিকারিকদের ওয়ার্ড ভিত্তিক নম্বরও দেওয়া রয়েছে। বিল্ডিং দফতরের পাল্টা যুক্তি, বাড়ি ভাঙা হলেই নিয়মিত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতরকে জানানো হয়।
পর্যাপ্ত নির্মাণ-বর্জ্য ওই প্লান্টে না পৌঁছনোয় কারখানা কী ভাবে চালু থাকবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে মোটা টাকা কী ভাবে পরিশোধ করবে পুরসভা, দানা বেঁধেছে সেই সংশয়ও।
মাস চারেক আগে রাজারহাটে প্লান্ট উদ্বোধনের সময়ে মেয়র ঘোষণা করেছিলেন, শহরের নির্মাণ-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্লান্টে নিয়ে আসা বাধ্যতামূলক করা হবে। অন্যথায় বর্জ্য উৎপাদককে জরিমানা করা হবে। সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে পুর আধিকারিকদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘নির্মাণ-বর্জ্য নিয়ে কঠোর হতে হবে পুর কর্তৃপক্ষকে। বর্জ্য-উৎপাদকের বিরুদ্ধে জরিমানা আদায় না করলে এমন প্লান্ট চালানো মুশকিল।’’
পরিবেশকর্মীদেরও দাবি, ‘‘নির্মাণ-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যেই প্লান্টটি তৈরি হয়েছে। এখন প্রোমোটিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্মাণ-বর্জ্য যাতে প্লান্টে পৌঁছয়, সে বিষয়ে পুরসভাকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।’’
মেয়র পারিষদ (কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) দেবব্রত মজুমদারের অবশ্য দাবি, ‘‘প্লান্ট সবে চালু হয়েছে। বর্ষায় বাড়ি ভাঙার কাজ কম হয়, তাই কম নির্মাণ-বর্জ্য পৌঁছচ্ছে। এর পরে পর্যাপ্ত পরিমাণেই তা প্লান্টে পৌঁছবে।’’