Crime

মন্দিরে গিয়ে বিয়ের জন্য ‘চাপ’ দিত বিবাহিত প্রিয়াঙ্কা

২০১১ সালের ১২ জুলাই খুন হন জুনিয়র। এই ঘটনায় ময়দানের একটি ক্লাবের প্রাক্তন কর্মকর্তার পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৩৬
Share:

আদালত চত্বরে প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী। ফাইল চিত্র

পুরো রাত বিয়েবাড়িতে কাটিয়ে, পরের দিন দুপুরে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে শাঁখ তুলে দিয়েছিল বেলঘরিয়ার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়র মৃধা। বিয়েবাড়ি থেকে শাঁখ! অবাক হয়ে গিয়েছিলেন জুনিয়রের মা শ্বেতাদেবী।

Advertisement

২০০৯ সালের সেই দিনের ঘটনা এখনও স্পষ্ট মনে রয়েছে শ্বেতাদেবীর। তিনি বলেন, “ছেলে আমাকে কখনও কিছু লুকোয়নি। সে দিনও ও আমায় বলে, জানো মা, বিয়েবাড়ি নিয়ে যাবে বলে মুন (প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর ডাকনাম) আমাকে শঙ্করপুরে নিয়ে গিয়েছিল। রাতে সেখানেই হোটেলে ছিলাম আমরা। প্রিয়াঙ্কা আমার বাবি (জুনিয়রের ডাকনাম)-কে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করেছে।”

২০১১ সালের ১২ জুলাই খুন হন জুনিয়র। এই ঘটনায় ময়দানের একটি ক্লাবের প্রাক্তন কর্মকর্তার পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁকে ফের ব্যারাকপুর আদালতে তোলার কথা।

Advertisement

শ্বেতাদেবী জানান, জুনিয়রের সঙ্গে পরিচয়ের পরে যখন-তখন তাঁদের বাড়িতে চলে আসত নিজেকে মডেল বলে পরিচয় দেওয়া প্রিয়াঙ্কা। শ্বেতাদেবী বলেন, “ও এসে বাবিকে খালি বলত, কী ভাল পরিবার তোদের। আমাদের সব আত্মীয়দের বাড়িতেও চলে যেত ওরা। আমি প্রথম থেকে এই সম্পর্ককে প্রশ্রয় দিইনি। বাবি তখন এমসিএ পড়ত। আমি বলেছিলাম, ও পড়াশোনা করছে, তুই ওকে বেশি বিরক্ত করিস না। তা হলে ওর লেখাপড়ার ক্ষতি হবে। কিন্তু মুন নাছোড়বান্দা মেয়ে ছিল। মিথ্যা কথা বলে আমার ছেলেকে যেখানে সেখানে নিয়ে চলে যেত।”

২০০৯ সালের গোড়ার দিকে এক দিন প্রিয়াঙ্কা এসে শ্বেতাদেবীকে বলে জুনিয়রকে রাতের এক পার্টিতে নিয়ে যায়। শ্বেতাদেবী বলেন, ‘‘রাতেই ফেরার কথা ছিল ওদের। কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেলেও না ফেরায় আমি বাবিকে বার বার ফোন করি। পরে মুন ফোন ধরে জানায়, অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, পরের দিন বাবি ফিরবে।’’

পরের দিন অনেক বেলায় প্রিয়াঙ্কার গাড়িতে ফেরেন জুনিয়র। শ্বেতাদেবী বলেন, “গাড়ি থেকে নেমে মুন বলে, এই নাও। তোমার ছেলেকে দিয়ে গেলাম। আমি বারান্দা থেকে চিৎকার করে বলি, সারা রাত বাইরে থাকিস, তোদের বাড়ির লোকেরা কিছু বলে না? মুন আমাকে বলে, ওদের বাড়ির লোকেরা কেউ কারও খোঁজ রাখে না। যে যার নিজের মতো বাড়িতে ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে যায়। আমি বলি, আমার ছেলে পড়াশোনা করে। ওকে আর কোনও দিন এই ভাবে নিয়ে যাবি না।”

তার বেশ কয়েক মাস পরে ফের তাঁর এক বান্ধবীর বিয়েতে জুনিয়রকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রিয়াঙ্কা। জুনিয়রের মা বলেন, “তোর বান্ধবীর বিয়েতে বাবি যাবে কেন? মুন বলে, বাবিরও নিমন্ত্রণ রয়েছে। রাতে ফিরে আসবে, এই শর্তে বাবিকে যেতে দিই। রাতের দিকে মুন ফোন করে বলে, কাকিমা আমরা একটু আনন্দ করছি। জুনিয়র কাল সকালে ফিরবে। পরের দিন সে ফিরল শাঁখ নিয়ে।”

জুনিয়রের বাবা সমরেশ মৃধা বলেন, “আমার ছেলে বা আমরা না-হয় জানতাম না। কিন্তু ও যে বিবাহিত, সে কথা তো ও নিজে জানত। তার পরেও কেন বার বার আমার ছেলেকে ও বিয়ের জন্য প্ররোচিত করল?” শ্বেতাদেবী বলেন, “বাবি আমাকে প্রায়ই বলত, জানো মা, মুন আমাকে বিভিন্ন মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বলে, আমাকে বিয়ে কর না। এখানেই সিঁদুর পরিয়ে দে না।”

শ্বেতাদেবী জানান, প্রিয়াঙ্কা যখন জুনিয়রকে বিয়ের জন্য চাপ দিত, তখন তিনি একটি সংস্থায় শিক্ষানবিশ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। জুনিয়রের মা বলেন, “বাবি মুনকে বলেছিল, তুই ও রকম বাড়ির মেয়ে। তোর যা স্টেটাস, তাতে তোকে বিয়ে করতে গেলে আমাকে তার যোগ্য হতে হবে। তার কিছু দিন পরেই তো জানা গেল, প্রিয়াঙ্কা বিবাহিত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement