প্রতীকী ছবি।
যে সব পড়ুয়ার স্কুলের ফি এখনও বকেয়া রয়েছে, তাদের অভিভাবকদের বকেয়া ফি-এর অন্তত ৫০ শতাংশ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠাতে শুরু করল বেসরকারি স্কুলগুলি।
বেসরকারি স্কুলগুলির প্রাপ্য বকেয়া ফি মেটানো নিয়ে এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ অগস্ট কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের চিঠি পাঠিয়ে স্কুলগুলি বকেয়া ফি-এর পরিমাণ জানাবে এবং অভিভাবকদের সেই টাকার ৫০% তিন সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে হবে। তা না হলে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার ক্লাস বন্ধ করা অথবা রেজিস্টার থেকে নাম কেটে দেওয়ার অনুমতি স্কুলকে দেওয়া হতে পারে। এমনকি দশম ও দ্বাদশ উত্তীর্ণ পড়ুয়াকে যাতে শংসাপত্র দেওয়া না-হয়, সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে সেই নির্দেশও দিতে পারে আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২ সেপ্টেম্বর। তার আগে সব পক্ষকে হলফনামা দিতে বলা হয়েছে।
শহরের বেশ কিছু স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বিপুল পরিমাণ ফি বকেয়া থাকায় স্কুল চালানোই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। উত্তর কলকাতার একটি বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষা জানান, করোনা শুরু হয়েছে গত বছরের এপ্রিলে। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত এক টাকাও ফি দেননি, এমন অভিভাবকও আছেন। অধ্যক্ষার কথায়, “আমাদের স্কুলে ফি যথেষ্ট কম। তা সত্ত্বেও ফি বকেয়া প্রায় এক কোটি টাকার কাছাকাছি। এই টাকা না মেটালে স্কুল চালাব কী করে? কী করেই বা শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের বেতন হবে?’’
রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বলেন, “বকেয়া ফি না-মেটানোর জন্য বহু বেসরকারি স্কুল ধুঁকছে। আমরা অভিভাবকদের অন্তত ৫০ শতাংশ ফি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছি। অনেকেই অবশ্য দিচ্ছেন।’’ সাউথ পয়েন্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, “আমাদের স্কুলে বেশির ভাগ অভিভাবকই বকেয়া ফি মিটিয়ে দিয়েছেন। যাঁরা মেটাননি, তাঁদের চিঠি পাঠানো হয়েছে।’’
যদিও অভিভাবকদের একাংশের পাল্টা বক্তব্য, সমস্যা তৈরি করেছে স্কুলগুলিই। হাই কোর্টের নির্দেশ না মেনে তারা নিজেদের মতো করে ফি-এর কাঠামো তৈরি করেছে। বেসরকারি স্কুলপড়ুয়াদের অভিভাবকদের সংগঠন ‘ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “বর্তমান শিক্ষাবর্ষে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ফি নেওয়া দূরে থাক, বেশ কিছু স্কুল নিজেদের মতো করে ফি অস্বাভাবিক বাড়িয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর হাই কোর্ট রায় দিয়েছিল, করোনা পরিস্থিতিতে টিউশন ফি এবং সেশন ফি-র ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। পাশাপাশি যে সমস্ত পরিষেবা পড়ুয়ারা পাচ্ছে না, সেগুলির ফি নেওয়া যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশ মানছে না অধিকাংশ স্কুল।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি তিন সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ফি-এর ৫০ শতাংশ না মেটালে পড়ুয়াদের অনলাইন ক্লাস করা বন্ধ করে দেবেন অথবা রেজিস্টার থেকে নাম কেটে দেবেন কর্তৃপক্ষ? কয়েকটি স্কুলের অধ্যক্ষেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা আশা করছেন, চিঠি পাঠানোর তিন সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ অভিভাবক বকেয়া ফি-এর ৫০ শতাংশ মিটিয়ে দেবেন। তা না মেটালে মামলার পরবর্তী শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মতো তাঁরা পদক্ষেপ করবেন।