Coronavirus Lockdown

বেতন কাটায় বিক্ষোভের হুমকি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের

ওই শিক্ষকদের একটি অংশের অভিযোগ, লকডাউন চলাকালীন খেয়ালখুশি মতো শুধু বেতন কমানোই নয়, কিছু বেসরকারি স্কুল শিক্ষকদের ছাঁটাইও করছে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০২:৩১
Share:

অবস্থান: টিউশন ফি ছাড়া অন্য ফি না দেওয়ার দাবিতে কলেজ স্কোয়ারে বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। বুধবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

লকডাউন পর্বের ফি কমানোর দাবিতে এত দিন বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা পথে নেমে বিক্ষোভ করছিলেন। এ বার লকডাউনের মধ্যে ইচ্ছে মতো তাঁদের বেতন কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভের হুমকি দিলেন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা।

Advertisement

ওই শিক্ষকদের একটি অংশের অভিযোগ, লকডাউন চলাকালীন খেয়ালখুশি মতো শুধু বেতন কমানোই নয়, কিছু বেসরকারি স্কুল শিক্ষকদের ছাঁটাইও করছে। অভিযোগ, যে সব শিক্ষকদের অনলাইনে ক্লাস নিতে হচ্ছে না বা কম ক্লাস করাতে হচ্ছে, যেমন গান, আবৃত্তি, আঁকা বা খেলা— তাঁদের উপরে কোপ পড়ছে বেশি। এ-ও অভিযোগ, যাঁরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন, তাঁদের কারও কারও বেতন ৫০-৭০ শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে !

কলকাতার একটি বেসরকারি স্কুলের এক শিক্ষক জানাচ্ছেন, লকডাউনের পর থেকে প্রতি মাসেই তাঁর বেতন কমছে। তাঁর কথায়, “লকডাউন শুরু হয়েছে মার্চের শেষে। মার্চ থেকে বেতন কমতে কমতে এখন মূল বেতনের ৩০ শতাংশ পাচ্ছি।” শিক্ষকদের অভিযোগ, অনলাইন ক্লাসে অনেকগুলি সেকশনের পড়ুয়াদের একসঙ্গে পড়ানোর জন্য শিক্ষক কম লাগছে। সেই দিক থেকে বিচার করে স্কুল কর্তৃপক্ষ যাঁরা অনলাইনে পড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন না, তাঁদের বেতন দিচ্ছেন না বা খুব কম দিচ্ছেন।

Advertisement

শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, লকডাউন পর্বে উদ্ভূত এই পরিস্থিতি তাঁদের কাছে নতুন। তাঁদের মতে, স্কুলে যখন তাঁরা ক্লাস নেন তখন চোখের সামনে পড়ুয়াদের দেখেই ক্লাস করাতে অভ্যস্ত ছিলেন এত দিন। অনলাইনে ক্লাস নেওয়া মানে শিক্ষকদের পড়ানোর লাইভ ভিডিয়ো পড়ুয়ারা বাড়িতে বসেই দেখতে পাচ্ছে। অনেক সময়েই পড়ানোর সময়ে ভিডিয়োয় দেখা যায়, অভিভাবকেরাও অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়ার পাশে বসে রয়েছেন। সে সব ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অস্বস্তি হওয়াও স্বাভাবিক। পাশাপাশি, অনলাইন ক্লাস ‘লাইভ’ হওয়ায় অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। সব মিলিয়ে মানসিক চাপে থাকেন তাঁরা। এই অবস্থায় বেতন কাটার সিদ্ধান্ত অমানবিক বলেই মত তাঁদের।

আরও পড়ুন: ক্যানসার নিয়েও করোনা জয় লড়াকু যুবকের

শিক্ষকদের বেতন কাটার অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানাচ্ছেন, তাঁদের এই সিদ্ধান্ত স্কুলকে বাঁচানোর জন্যই নিতে হয়েছে। যেমন, গত কয়েক দিন ধরে অভিযোগ উঠছে, কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার একটি স্কুলের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষকদের বেতন কাটা হচ্ছে। ওই স্কুলের রিষড়া শাখার প্রিন্সিপাল কে নরেশ বলেন, “লকডাউনের মধ্যে খুব কম পড়ুয়ার থেকে টিউশন ফি পাওয়া গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের বেতন খানিকটা কাটতে হয়েছে। তবে কোনও শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়নি।” যদিও ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইভেট স্কুলস টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে কিংশুক দাসের অভিযোগ, “অভিভাবকদের কাছ থেকে বেতন নিয়েও শিক্ষকদের বেতন ঠিক মতো দিচ্ছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। দু’-এক জন পড়ুয়ার অভিভাবক হয়তো নিরুপায় হয়ে কম বেতন দিয়েছেন। তার জেরে সামগ্রিক ভাবে শিক্ষকদের বেতন কাটা অযৌক্তিক। এমনকি এর প্রতিবাদ করলে কর্তৃপক্ষ স্কুল থেকে বহিষ্কারের হুমকিও দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতি চললে শিক্ষকেরা এ বার পথে নেমে আন্দোলন করবেন।”

এ দিকে, টিউশন ফি বাদে অন্য কোনও ফি না দেওয়ার দাবিতে বুধবার কলেজ স্কোয়ারের গেটের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান করেন কয়েকটি বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। ‘ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা বিক্ষোভ দেখাতে বাধ্য হচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে দাবি জানিয়েছি। দাবি না মানলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement