দখল: বিতর্ক এই সব অ্যাম্বুল্যান্স নিয়েই। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
রোগী পরিষেবা দেওয়ার নামে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের বিরুদ্ধে জুলুমের অভিযোগ উঠল আর জি কর হাসপাতাল চত্বরে। সেখানকার পুর-প্রতিনিধির দাবি, রোগী ধরে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চক্র চালাচ্ছেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। অভিযোগ, কলকাতা পুরসভা পার্কিং ফি চালু করলেও আর জি কর হাসপাতালের বিপরীত রাস্তায় তাঁরা তা রাখছেন কোনও ফি ছাড়াই। ফি দেওয়া তো দূর, উপরন্তু তা দিতে হলে বিক্ষোভে বসার হুমকি দিয়েছেন চালকেরা। ফলে আগামী দিনে ওই হাসপাতালে যেতে হয়রানির আশঙ্কা করছেন রোগীর পরিজনেরা।
আর জি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দুর্নীতি রোধে হাসপাতাল চত্বরে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা বেশ কিছু দিন আগেই নিষিদ্ধ করেছিলেন তাঁরা। বাইরের গাড়ি-সহ বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সও হাসপাতালের বাইরে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। তার পর থেকে হাসপাতালের প্রবেশপথের বিপরীতে ক্যানাল ইস্ট রোডমুখী রাস্তার একটি অংশে দাঁড় করানো থাকত কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্স। মাস দুয়েক আগে দরপত্র ডেকে এক সংস্থাকে রাস্তার ওই অংশে পার্কিং ফি আদায়ের অনুমতি দিয়েছে পুরসভা। অভিযোগ, পার্কিং ফি-র বোর্ড
লাগানো হলেও চালকেরা সেই নির্দেশ মানছেন না।
টালা সেতু বন্ধের পরে শহরের যান পরিস্থিতি দেখতে সম্প্রতি ওই হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় যাওয়া হয়েছিল। দেখা গেল, মূল গেটের বিপরীতে পরপর দাঁড় করানো অ্যাম্বুল্যান্স। রোগী দেখলেই এক থেকে দু’হাজার টাকা দর হাঁকছেন চালকেরা। জায়গা বুঝে চাওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। পাশেই একটি দেওয়ালে ঝোলানো পার্কিং ফি সংক্রান্ত তালিকা। তা দেখিয়েই তমাল বিশ্বাস নামে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক বললেন, ‘‘পার্কিংয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্যও টাকা চাওয়া হচ্ছে দেখুন। রোগীর পরিষেবা দিতে গিয়েও টাকা দিতে হলে কিছু বলার নেই। টাকা দেব না, দেখি কে সরায়।’’ কিছু ক্ষণ বাদে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া নিতে
আসা এক ব্যক্তিকে তিনিই বলেন, ‘‘ভাড়া কমানো যাবে না। দেখছেন না, পার্কিং নিচ্ছে!’’
এলাকাটি কলকাতা পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। স্থানীয় কাউন্সিলর তরুণ সাহা বলেন, ‘‘ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা রোগী ধরে নিজেদের চেনা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। বদলে মোটা টাকা নেন। এ দিকে রোগী পরিষেবার কথা বলেন!’’ আর জি কর হাসপাতালের সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ওঁদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। সে কারণেই হাসপাতাল চত্বরের বাইরে রাখা।’’
অভিযোগ অস্বীকার করে এলাকার অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা হুমকি দেন, পার্কিংয়ের জন্য চাপ দিলে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাবেন তাঁরা। রোগীর পরিজনেদের প্রশ্ন, তখন হাসপাতালের হাতে গোনা অ্যাম্বুল্যান্সে কাজ হবে? পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্কিং) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘নিয়ম মেনে সকলে পার্কিংয়ের টাকা দিতে বাধ্য। অ্যাম্বুল্যান্স বলে অকারণ ছাড় দেওয়া যায় না।’’