প্রতীকী ছবি।
বন্দিদের জমানো টাকা ‘গচ্ছিত’ রয়েছে জেল কর্তৃপক্ষের দফতরে। কিন্তু অভিযোগ, উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে সেই টাকা বণ্টন করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে দমদম জেলের অন্দরে। আর ওই টাকা ফেরতের দাবিতে গত ২৭ জুলাই থেকে ‘অনশনে’ বসেছেন পাকিস্তানের নাগরিক এক বন্দি। একই দাবিতে এ মাসের শুরু থেকে ‘অনশনে’ বসেছেন আরও কয়েক জন বিচারাধীন বন্দি। যদিও বন্দিদের এই অনশনের কথা স্বীকার করতে চাননি কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস।
পাকিস্তানের নাগরিক শাহবাজ ইসমাইল ১০ বছর আগে আইএসআই চর সন্দেহে এ রাজ্য থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে দমদম জেলে বন্দি। গত বছরেই যাবজ্জীবনের সাজা হয়েছে তাঁর। জেল সূত্রের খবর, তিনি দাবি করেছেন, তাঁর কাছে জমানো ৪০ হাজার টাকা ছিল। তার খানিকটা খরচ হওয়ার পরে বাকি টাকা তিনি ফেরত চেয়েও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। সেই টাকা ফেরতের দাবিতে গত ২৭ জুলাই থেকে ‘অনশন’ শুরু করেছেন শাহবাজ। একই দাবিতে চলতি মাসের শুরুতে অনশনে বসেছেন আরও কয়েক জন বন্দি। শুক্রবার শাহবাজকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, সাজা পাওয়ার পরে জেলের কাজ করে বেতন পাচ্ছেন শাহবাজ।
বন্দিদের খাওয়াদাওয়া বন্ধ করাকে ‘অনশন’ হিসেবে দেখতে না চাইলেও জেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বন্দিদের জমানো টাকা নিয়ে জটিলতার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ২০২০ সালে করোনার সময়ে প্যারোলে মুক্তির দাবিতে বন্দিদের একাংশ জেলে গোলমাল পাকিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন। তাতে জেলের ভিতরে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেই ঘটনায় বন্দিদের গচ্ছিত টাকা সংক্রান্ত নথিও পুড়ে গিয়েছে বলে দাবি জেল কর্তৃপক্ষের। এক কারা আধিকারিকের কথায়, ‘‘জমানো টাকা সংক্রান্ত কোনও উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারছেন না বন্দিরা। কিন্তু কাউকে তাঁর কথামতো টাকা ফেরত দিতে গেলে তো জটিলতা আরও বাড়বে। তাই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’
যদিও কারামন্ত্রী বলছেন, ‘‘করোনার সময়ে প্যারোলে মুক্তি পাওয়া, সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা টাকাপয়সা নিয়েই বাড়িতে গিয়ে খরচ করেছেন। দমদম জেলে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের সংখ্যা বেশি, বিচারাধীন বন্দি খুব বেশি নেই। আজগুবি তথ্য, অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা জেলে পরিশ্রম করে যে টাকা রোজগার করেন, তা তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। কিন্তু বিচারাধীন বন্দিরা জেলের ভিতরে ক্যান্টিনে খেতে বা টেলিফোন বুথ থেকে বাড়িতে ফোন করার জন্য পরিবারের থেকে টাকা নিয়ে রাখতেন বলেই দমদম জেল সূত্রের খবর।
মাওবাদী সংগঠনের হয়ে কাজ করা, দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দা অখিলচন্দ্র ঘোষকে ১১ বছর আগে এ শহর থেকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। কয়েক মাস আগে তিনি দমদম জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধ শনিবার অভিযোগ করেন, ‘‘যখন মেদিনীপুর জেলে ছিলাম, তখন বাড়ি থেকে মানি অর্ডার যেত। দমদম জেলে থাকার সময়ে বাড়ির লোক দেখা করতে গেলে টাকা দিয়ে আসতেন। জমা থাকত জেল কর্তৃপক্ষের কাছে। ৩৯০০ টাকা জমা রয়েছে। বেরোনোর সময়ে তার কিছুই পাইনি। অনেকের সঙ্গেই এটা ঘটেছে।’’
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূরের অভিযোগ, ‘‘রাজনৈতিক বন্দি অসীম ভট্টাচার্যের ৫০০০ টাকা, অনুপ রায়ের ১০০০ টাকা দমদম জেলে জমা রয়েছে। অনুপবাবুও অনশন করছেন। জেলের ভিতরে গোলমালের জন্য বন্দিরা নিজেদের টাকা পাবেন না কেন? বন্দিদের টাকা এ ভাবে আত্মসাৎ করার চেষ্টা অন্যায়।’’