আনন্দযজ্ঞ: ভাইফোঁটা উপলক্ষে মিষ্টির কেনাবেচা। বুধবার, হেদুয়ার এক দোকানে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজোর পরে ভাইফোঁটার অপেক্ষায় থাকে বাঙালি। তবে ভাইবোনেদের উৎসবের দু’দিন আগে থেকেই জিনিসপত্রের দাম আগুন। আনাজ থেকে মাছ-মাংস— সব কিনতেই নাকাল ক্রেতারা।
মানিকতলা, গড়িয়াহাট, কলেজ স্ট্রিট বা ল্যান্সডাউন— শহরের বিভিন্ন বাজারে এসে জিনিসপত্রের দাম শুনে চমকে যাচ্ছেন ক্রেতা। ফলে বাজেট অনুযায়ী ভেবেচিন্তে কেনাকাটা করতে হচ্ছে। লক্ষ্মীপুজোর আগেই আনাজ, মাছ-মাংসের দাম বেড়েছিল। ফের ভাইফোঁটার জন্য দাম বেড়েছে।
‘ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজ়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে গঠিত রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলের সাফাই, ‘‘প্রতি বছর লক্ষ্মীপুজো থেকে ভাইফোঁটা পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রীর দাম একটু বেশি থাকে। শীত পড়লে দাম কমে।’’ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেন্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি তথা রাজ্য টাস্ক ফোর্সের আর এক সদস্য কমল দে বলেন, ‘‘সারের দাম খুব বেড়েছে। জ্বালানির দামও অত্যধিক বাড়ায় চাষিরা দূর থেকে বাজারে আনাজ আনতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। ফলে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।’’ কমলের আরও অভিযোগ, ট্রেনের ভেন্ডার কামরায় ২০০ কেজির বেশি আনাজ বহন করতে পারেন না চাষিরা। তাই বেশি খরচে সড়কপথে আনাজ আসছে।
শহরের বাজারে বুধবার জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে ২৮-৩০ টাকা কেজি দরে। চন্দ্রমুখী আলু ও পেঁয়াজ ৪০ টাকায়। মানিকতলা বাজারে আসা এক ক্রেতার কথায়, ‘‘সবার আগে প্রয়োজন আলু, পেঁয়াজের। কিন্তু এই দুটো জিনিসের দাম বহু দিন ধরে কমল না।’’ ওই বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, যে কুমড়ো দিনকয়েক আগে ৩০ টাকায় বিকিয়েছে, এ দিন তা ৪০ টাকার নীচে মেলেনি। একই অবস্থা পটল, ফুলকপি, টম্যাটো, কাঁচালঙ্কা, ঢেঁড়স, বেগুনের।
মঙ্গলবার পর্যন্ত মানিকতলা বাজারে খাসির মাংসের দাম ছিল কেজি প্রতি ৭৮০ টাকা। বুধবার তা বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকায়। মুরগির মাংস ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। বিভিন্ন বাজারে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দর ছিল ১৫০০-১৮০০ টাকা। দিন দুয়েক আগে বড় কাতলার দর যেখানে ছিল কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা, সেটাই এখন ৪৫০ টাকা। পাঁচ কেজি ওজনের কাটা রুই মাছের দাম ৩০০ টাকা থেকে হয়েছে ৪০০। পাবদা বিকোচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। ভেটকির দাম ৬০০-৭০০ টাকা। গড়িয়াহাট বাজারে আসা এক তরুণীর কথায়, ‘‘ভাইফোঁটার মতো খুশির দিনে দামের কথা না ভেবেই কিনলাম।’’
ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম নিয়ন্ত্রণে রাজ্য টাস্ক ফোর্স নামেই গঠন করেছে। তারা নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করে না। প্রশাসন সক্রিয় হলে জিনিসপত্রের দাম এত বাড়ত না। কমল দে বলেন, ‘‘আমরা যখন-তখন বাজারে যেতে পারি না। পুলিশ অভিযানে গেলে আমরাও সঙ্গে থাকি। সব জিনিসের দামের লাগামছাড়া বৃদ্ধির জন্যই আনাজের দাম বেড়েছে।’’