বৌবাজারে পর পর বিপর্যয়ের জেরে শুধু পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ নয়, বিপর্যয়ের আঁচ লেগেছিল পূর্বমুখী সুড়ঙ্গেও। —ফাইল চিত্র।
খননের সময় থেকে নানা পর্যায়ে বার তিনেক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ। এসপ্লানেড থেকে শিয়ালদহের মধ্যে বৌবাজার লাগোয়া অংশে ওই বিপর্যয়ের ফলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েই এক সময়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। এ বারই প্রথম ওই সুড়ঙ্গের সমস্যা মিটিয়ে রেললাইন পাতার জন্য প্রয়োজনীয় ভিত তৈরি শুরু হয়েছে। সুড়ঙ্গের দু’টি আলাদা জায়গায় প্রায় ১০৮ মিটার অংশে ক্ষতি হয়েছিল। ইস্পাতের পাত বসিয়ে সেই ক্ষত মেরামত করে এ বার লাইন পাতার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
পাশের পূর্বমুখী সুড়ঙ্গ দিয়েই এত দিন ইস্ট-ওয়েস্টের সেন্ট্রাল পার্কের ডিপো থেকে এসপ্লানেড-হাওড়া ময়দান অংশে পরিষেবা দেওয়ার জন্য মেট্রোর রেক ছুটিয়ে হাওড়া ময়দানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ বার ওই সুড়ঙ্গের ক্ষেত্রেও ভিতরে বসানো রেললাইন এবং থার্ডরেল তুলে ফেলে, সেখানে দু’টি আলাদা জায়গায়, মোট ৯২ মিটার অংশে সুড়ঙ্গ মজবুত করতে ইস্পাতের পাত বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
মেট্রো সূত্রের খবর, বৌবাজারে পর পর বিপর্যয়ের জেরে শুধু পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ নয়, বিপর্যয়ের আঁচ লেগেছিল পূর্বমুখী সুড়ঙ্গেও। দু’টি সুড়ঙ্গেই সামান্য হলেও বৃত্তাকার পরিধিতে বদল এসেছিল। তার ফলে সুড়ঙ্গের আকার সম্পূর্ণ গোলাকার থেকে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিল। এই অবস্থায় সুড়ঙ্গের সুরক্ষা বাড়াতেমরচে এবং ক্ষয়রোধী ইস্পাতের বিশেষ পাত বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে জন্য নির্দিষ্ট পরিধির দু’টি করে অর্ধবৃত্তাকার পাত সুড়ঙ্গের দেওয়ালে বসিয়ে তা জুড়ে একটি পূর্ণ বৃত্তের চেহারা দেওয়া হচ্ছে। সর্বোচ্চ ১-১.২ মিটার প্রশস্ত ওই পাতগুলির ওজন ২.২-২.৫ টন পর্যন্ত। প্রায় ৩২ মিলিমিটার পুরু ওই পাতগুলি বিশেষ ভাবে তৈরি। মেট্রোরসুড়ঙ্গে প্রয়োজনীয় অংশের দেওয়ালে ওই পাতগুলি বসানো হচ্ছে। সেল এবং জিন্দাল স্টিল সংস্থা থেকেওই পাত আনা হয়েছে। পরে সুড়ঙ্গ এবং ইস্পাতের পাতের মাঝের অংশে তৈরি হওয়া ফাঁকে শক্তিশালী রাসায়নিকের মিশ্রণ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
মেট্রো সূত্রের খবর, এত দিন পূর্বমুখী সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে বৌবাজারে বিভিন্ন সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল। এখন পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। সে জন্য এসপ্লানেডে পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ লাগোয়া অংশে পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের শেষে ওই সুড়ঙ্গে লাইন পাতার কাজ সেরে ফেলা হবে। জানুয়ারিতে পূর্বমুখী সুড়ঙ্গের কাজ মিটবে। তার পরে দু’টি সুড়ঙ্গেই ট্রেন চালানোর মহড়া শুরু হবে। আগামী মার্চ নাগাদ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় পুরো পথ জুড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।