প্রতীকী ছবি।
হাতে আর মাত্র তিন দিন। রবিবারেই কলকাতার পুরভোট। সেই ভোট ঘিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন কলকাতা পুলিশের প্রায় আঠারো হাজার এবং রাজ্য পুলিশের পাঁচ হাজার সদস্য। আগামী কাল, শুক্রবার থেকেই শহরে মোতায়েন করা হবে ওই পুলিশকর্মীদের। সে দিনই বিভিন্ন এলাকায় রুট মার্চ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে রাইফেলধারী পুলিশ। এমনটাই জানিয়েছে লালবাজার। এক-একটি ভোটকেন্দ্রে সর্বাধিক ১৩টি বুথ থাকতে পারে। তেমন কেন্দ্রগুলিতে চার জন রাইফেলধারী পুলিশকে রাখা হবে। কিন্তু যে সব কেন্দ্রে একটি থেকে তিনটি বুথ থাকবে, সেখানে দু’জন রাইফেলধারী পুলিশকর্মী থাকবেন। এর পাশাপাশি প্রতি বুথে থাকবেন এক জন করে লাঠিধারী পুলিশকর্মী।
লালবাজার সূত্রের খবর, দু’টি বুথ-পিছু এক জন করে এএসআই থাকবেন। এ ছাড়াও কিছু বুথে সার্জেন্ট বা এসআই থাকবেন। যে সব ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ছ’টির বেশি বুথ রয়েছে, সেখানকার দায়িত্ব অবশ্য থাকছে এক জন ইনস্পেক্টরের হাতে। কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডে মোট ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ১৬৫৬টি। মোট বুথ ৪৯৫৯টি। লালবাজার সূত্রের খবর, একটিই বুথ রয়েছে, এমন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৩৪টি। দু’টি বুথ রয়েছে, এমন কেন্দ্র ৪৭৪টি এবং ১০-এর বেশি বুথ রয়েছে, এমন ভোটগ্রহণ কেন্দ্র শহরে ১১টি। এ বার সব চেয়ে বেশি বুথ থাকছে হরিদেবপুর থানা এলাকায়। সেখানে মোট বুথ ১৮৯টি। এর পরেই রয়েছে পর্ণশ্রী থানা এলাকা। সেখানে বুথের সংখ্যা ১৭৮টি।
নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে গোটা কলকাতা পুলিশ এলাকাকে ভাগ করা হয়েছে ২৮৬টি সেক্টরে। প্রতি সেক্টরের জন্য থাকছে একটি সেক্টর মোবাইল বাহিনী। বাহিনীর সদস্যেরা নিজেদের এলাকায় ভোটের আগের দিন, শনিবার থেকেই টহল দিতে শুরু করবেন।
এ ছাড়াও থাকছে ৭৮টি ক্লাস্টার মোবাইল বা কুইক রেসপন্স টিম। ওই দলে এক জন অফিসার ছাড়াও থাকবেন তিন জন করে পুলিশকর্মী। তবে বিশেষ কুইক রেসপন্স টিমে থাকবেন চার জন রাইফেলধারী পুলিশকর্মী।
নিরাপত্তায় যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, তার জন্য ভোটের আগের দিন থেকেই সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের এক কর্তা। তাই শনিবার থেকেই এলাকায় ঘুরবে চার জন পুলিশকর্মীকে নিয়ে ৭২টি আর টি ভ্যান বা আরএফএস বাহিনী। শহরের ৩৫টি স্পর্শকাতর জায়গায় ঘাঁটি তৈরি করবে হেভি রেডিয়ো ফ্লাইং স্কোয়াড বাহিনীর গাড়ি। ৫০টি জায়গায় নাকা-তল্লাশি এবং ২০০টি পুলিশ-পিকেটের ব্যবস্থাও থাকছে। মূলত শহরের ঢোকা-বেরোনোর পথেই থাকছে ওই নাকা-তল্লাশির কেন্দ্র।
ভোটের আগের দিন যাতে বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের দল শহরে ঢুকতে না পারে, তার জন্য পদক্ষেপ করতে সোমবার কলকাতা পুলিশের কর্তারা বৈঠক করেছেন বিধাননগর, ব্যারাকপুর এবং হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের সঙ্গে। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বারুইপুর ও ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার কর্তারাও। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, শনিবার থেকেই বিভিন্ন জায়গায় নাকা-তল্লাশি চলবে।
লালবাজার জানাচ্ছে, কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের ১০৭টি দল শনিবার থেকে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াবে। ডিভিশনাল ডিসি ছাড়াও ন’জন ডিসিকে ৬৯টি থানার দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ওই দিন থেকেই নিজের নিজের থানা এলাকার দায়িত্ব নেবেন। তাঁদের অধীনে থাকছেন ৩৩ জন এসি। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে টহল দেবে কমান্ডো বাহিনী। যারা শনিবার থেকেই শহরের
রাস্তায় থাকবে। গোলমালের খবর পেলেই সেখানে পৌঁছে যাবে ওই বাহিনী।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, এ বারের ভোটে বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড থেকে ১৩৮ জন অফিসারকে রবিবারের জন্য নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক সার্জেন্টকে মোটরবাইকে করে দু’টি করে থানা এলাকায় নজরদারি চালাতে হবে বলে জানা গিয়েছে।