রথের আগে দিনবদলের আশা করছেন কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। —ফাইল চিত্র।
করোনার তিন বছরের ‘খরা’ কাটিয়ে এ বার কি প্রাণ ফিরবে কুমারটুলির বায়নার বাজারে? রথের আগে সেই দিনবদলের আশা করছেন কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। যে ভাবে এ বছরে রথের আগে থেকেই প্রতিমার বায়না আসা শুরু হয়েছে, তাতে মন্দা কাটিয়ে প্রথা মেনে রথের দিনেও ভিড় জমবে বলে মনে করছেন শিল্পীদের বড় অংশ। তবে বাড়তে থাকা প্রতিমার দাম কিছুটা হলেও চিন্তায় রাখছে কুমোরটুলিকে।
রথের দড়িতে টান পড়ছে মঙ্গলবার। আর সেই দিনেই কুমোরটুলিতে প্রতিমা বায়না করার পুরনো রেওয়াজ রয়েছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে। শহরের সর্বজনীন পুজো উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি, বাড়ির পুজোর একটা বড় অংশও এই দিনেই দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু করেন। আগে থেকে নানা প্রস্তুতি নেওয়া শুরুহলেও অনেকেই রথের দিনই কুমোরটুলিতে গিয়ে প্রতিমার বায়না করেন। যদিও গত কয়েক বছর করোনার কারণে এই রীতি অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। করোনার সময়ে বায়না দেওয়া তো দূর, উদ্যোক্তাদের দেখাই মেলেনি কুমোরটুলি চত্বরে। গত বছর করোনার বাড়বাড়ন্ত কম থাকায় তা-ও প্রথা মেনে রথের দিন কিছু বায়না হলেও তার আগের দু’বছরের রথে প্রায় কোনও বায়নাই হয়নি বলে শিল্পীদের দাবি।
তবে এ বছরে রথের আগে ফিরেছে কুমোরটুলির চেনা ছবি। রথের আগে থেকে যে ভাবে প্রতিমার বায়না আসা শুরু হয়েছে, তাতে আশায় বুক বাঁধছেন মৃৎশিল্পীরা। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ বছর মাস দুয়েক আগে থেকেই বায়না আসা শুরু হয়েছে। কেউ দু’টি, কেউ তিনটি আবার কেউ সাতটি প্রতিমার বায়না ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছেন। রথের দিন সেই সংখ্যা যে আরও বাড়বে, তা একপ্রকার নিশ্চিত শিল্পীরা। কুমারটুলির প্রতিমাশিল্পী প্রদ্যুৎ পাল জানান, উদ্যোক্তাদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বছর প্রতিমার দামকেমন হবে, তার খোঁজ নিতেও আসছেন অনেকে। ফলে রথের দিন বায়না করতে আসা উদ্যোক্তাদের ভিড় বাড়বে বলেই মনে করছেন তিনি। প্রদ্যুতের কথায়, ‘‘গত বছরের রথে তা-ও দুটো বায়না হয়েছিল। তার আগের বছরে কিছুই হয়নি। আশা করছি, রথ এ বার হতাশকরবে না।’’ করোনা-যুগের আগে রথের দিনেই প্রতিমার ১০-১২টা করে বায়না পেতেন প্রদ্যুৎ। একই সুর আর এক শিল্পী মন্টু পালের গলায়। ইতিমধ্যেই সাতটি বায়না তাঁরপকেটে। তাঁর কথায়, ‘‘এ বছর কোভিডের কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে পুজো নিয়ে কোনও আশঙ্কা নেই। করোনার ভয় কাটিয়ে গত বছর থেকেই উল্টো হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। এ বার আশা করি পুরনো দিন ফিরবে।’’
তবে মাটির দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়ে যাওয়া কিছুটা হলেও চিন্তায় রেখেছে শিল্পীদের। গত কয়েক মাসে নৌকা প্রতি ভাল মাটিতে ৭০০-৮০০ টাকা দাম বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। ফলে প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। যার ফলে চিন্তায় বহু উদ্যোক্তাই। বাজেট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। বালিগঞ্জের এক উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘সব জিনিসের দামই তো দেখছি লাফ দিয়েছে। বাজেটে আদৌ কুলিয়ে ওঠা যাবে কি না, তা নিয়ে তো চিন্তা থাকছেই।’’