পথের দাবি: জাতীয় পতাকা হাতে অবস্থান-মঞ্চে এলেন অনেকেই। রবিবার, পার্ক সার্কাসে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
এ যেন এক ভিন্ন প্রতিবাদ!
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের কলকাতা সফরের প্রতিবাদে পার্ক সার্কাসে একত্রে উপবাস পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন প্রায় দুশো জন মহিলা। শুধু উপোস রাখাই নয়, রবিবার বিকেলে একসঙ্গে বসে ইফতারি খেয়ে রোজাও ভাঙলেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যেই এক প্রৌঢ়া বলেন, ‘‘ওই অমিত শাহের জন্যই বাড়ির মেয়েরা আজ পথে নেমেছেন। পথেই রোজা ভেঙে প্রতিবাদ জানানো হল।’’
পার্ক সার্কাসের অবস্থানের ৫৫তম দিন ছিল এ দিন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় শুরু থেকেই সেখানে অনেকে রোজা রাখছিলেন। এ দিন সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয় প্রায় দুশো। উদ্যোক্তাদের তরফে আসমত জামিল বলেন, ‘‘সদ্য দিল্লিতে ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক ঘটনার জন্য কারা দায়ী, সকলেই জানেন। সেই হিংসা যাঁরা রুখতে পারেননি, তাঁদের মধ্যে কেউ কলকাতায় এলে আমরা মানব কেন? তাঁদের বিরুদ্ধে তো উস্কানি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।’’ অবস্থানে শামিল মেহেদিবাগানের বাসিন্দা, ষাটোর্ধ্ব শফিকা হোসেন প্রথম দিন থেকেই রোজা রাখছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘তিন যুগ ধরে আমরা এ দেশে আছি। এখন হঠাৎ বলছে, কাগজ দেখাতে হবে! মরতে হয়, এখানেই মরব। তবু এ দেশ ছেড়ে যাব না, কাগজও দেখাব না।’’
এ দিন সকাল থেকেই পার্ক সার্কাস ময়দানে ভিড় বাড়তে শুরু করে অবস্থানকারীদের। অনেকেরই হাতে কালো পতাকা। বড়দের সঙ্গে হাজির ছিল ছোটরাও। বিকেলের পরে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও যোগ দেন পার্ক সার্কাসে। ‘আজ়াদি’র পাশাপাশি এক সময় স্লোগান উঠতে শুরু করে, ‘‘অমিত শাহ গো-ব্যাক।’’ ধীরে ধীরে সেই প্রতিবাদই আরও ধারালো হয়ে ওঠে বেলা ২টো নাগাদ। বিজেপি নেতা তখন সবে শহিদ মিনার চত্বরের জনসভার মঞ্চে উঠেছেন। কোনও ভাবে সেই খবর অবস্থান স্থলে পৌঁছতেই গর্জে ওঠে পার্ক সার্কাস। ফের স্লোগান ওঠে, ‘‘বাংলায় তোমার জায়গা নেই। অমিত শাহ এ রাজ্য থেকে ফিরে যাও।’’
একসঙ্গে রোজা ভঙ্গ মহিলা অবস্থানকারীদের। রবিবার, পার্ক সার্কাসে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
ব্যারাকপুর থেকে ‘নো এনআরসি মুভমেন্ট’-এর সংগঠক সংগ্রাম চক্রবর্তী মিছিল করে সেখানে হাজির হন। সংগ্রাম বলেন, ‘‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কেন্দ্র বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের এই প্রতিবাদ চলবে। পার্ক সার্কাসের মহিলাদের পাশে থাকতেই অমিত শাহের সভার দিন এলাম।’’
এ সবের মধ্যেই অবস্থান স্থলে ঘুরপাক খেতে থাকে দিল্লির শাহিন বাগ থেকে সদ্য পার্ক সার্কাসে ঘুরে যাওয়া ‘দেশের দাদি’ বিলকিসের কথা। এক মহিলা বললেন, ‘‘দাদি শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, কী ভাবে
অন্যায়কারীদের চোখে চোখ রেখে দাঁড়াতে হয়। তাঁর কথা মনে রেখেই আজ তৈরি ছিলাম।’’ পার্ক সার্কাসে বাড়তি বাহিনী মজুত রেখে তৈরি ছিল পুলিশও। তবে বিকেলের পরেও অবস্থান শান্তিপূর্ণই রয়েছে দেখে সরিয়ে নেওয়া হয় অনেক পুলিশকর্মীকে। এক অবস্থানকারী বললেন, ‘‘শাহিন বাগ থেকে পার্ক সার্কাস— শান্তিপূর্ণ অবস্থানই আমাদের পথ। কোনও এক শাহবাবুর জন্য আমরা পথ হারাব কেন?’’