এমনই হাল।— অরুণ লোধ
সর্বক্ষণ মশারি টাঙানো। তার ভিতরেই চলছে খাওয়া। দুর্গন্ধ এড়াতে দরজা-জানালা বন্ধ। ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ছে সাপ, বিষাক্ত মাকড়। ঘরে ঘরে অ্যালার্জি, চর্মরোগ। মশার উপদ্রব তো আছেই। কলকাতা পুরসভার ১৩০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বেহালার ইউনিক পার্ক এলাকায় এই পরিস্থিতি দীর্ঘ দিন। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, একটি খোলা নর্দমাই এই সমস্যার কারণ। পুরসভার সর্বস্তরে জানিয়েও সুরাহা হয়নি।
ম্যান্টন থেকে বেচারাম চ্যাটার্জি স্ট্রিট চলে গিয়েছে ইউনিক পার্কের দিকে। এই এলাকারই একটি রাস্তা রামকৃষ্ণ সরণি। স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের আগেই শুরু হয়েছে নর্দমাটি। সেখান থেকে ইউনিক পার্ক রোড পর্যন্ত সেটি ঢাকা। ইউনিক পার্ক রোডের বাকি অংশ থেকে ঢালিপাড়ার শুরু পর্যন্ত নর্দমার প্রায় ৭০০-৮০০ মিটার খোলা। তার পরের অংশ আবার ঢেকে দিয়েছে পুরসভা।
এক বাসিন্দা জানান, দু’ধারের ঢাকা নর্দমার মুখ বন্ধ থাকায় জল বেরনোর কোনও পথই নেই। নর্দমাটির খোলা অংশের সঙ্গে আশপাশের বাড়ির নিকাশিরও সংযোগ রয়েছে। থার্মোকল, প্লাস্টিক, কাচের শিশি আর নোংরায় জমে বদ্ধ হয়ে গিয়েছে সেই নর্দমা। নর্দমার দু’ধার ঘেঁষে রয়েছে বাড়ির পাঁচিল। ফলে সেটি পরিষ্কারের কার্যত কোনও জায়গাই নেই। বাসিন্দা অণীশ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘স্থানীয় কাউন্সিলর, মেয়র পারিষদ (নিকাশি) সর্বস্তরেই লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। ফল মেলেনি। সম্প্রতি পুরসভার কর্মীরা এসে ১০০ মিটার পরিষ্কার করেছে। বাকি অংশের হাল একই রকম। দুর্ভোগও অব্যাহত।’’
কেন এই পরিস্থিতি? স্থানীয় কাউন্সিলর অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘এমনিতেই বেহালা অনেক পুরনো এলাকা। পুরনো পরিকল্পনা অনুসারে ওখানকার ১২টি বাড়ির নিকাশি এমন ভাবে তৈরি হয়েছে যে বাড়িগুলির নিকাশির সংযোগ কোনও ভাবেই মূল রাস্তার ভূগর্ভস্থ নিকাশিতে এনে ফেলা যাবে না। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে খোলা নর্দমাটি বন্ধ না করে নিকাশি পাইপ বসানো হবে। বাড়ির নিকাশি সেই পাইপের সঙ্গেই যুক্ত থাকবে। ওই পাইপটিকে মূল রাস্তার নিকাশির সঙ্গে যোগ করা হবে।’’ অভিজিৎবাবুর দাবি, ‘‘প্রতি সপ্তাহে নর্দমা পরিষ্কার করা হয়।’’
অণীশবাবুর যদিও দাবি, ‘‘জুলাই ২০১৪ সালের পরে পুরো নর্দমাটি ঠিকমতো পরিষ্কার করেনি পুরসভা। সম্প্রতি কাজ হলেও তা যথেষ্ট নয়। এ বারেও নর্দমার সামান্য অংশ পরিষ্কার হয়েছে।’’ একই বক্তব্য
অন্য বাসিন্দাদেরও।
মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ বলেন, ‘‘বাসিন্দারা আমাকে ছবি-সহ চিঠি দিয়েছেন। ওঁদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। ওই নর্দমা ঢাকতে প্রায় দশ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হয়েছে। দরপত্র ডাকা হবে। আশা করছি বর্ষার পরে কাজ শুরু হবে।’’