ফাইল চিত্র।
এক দিকে, তেল কেনার টাকা জোটাতে হিমশিম খাওয়ার দশা। অন্য দিকে, দীর্ঘ দিন ভাড়া না বাড়ায় প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে আর্থিক স্বাস্থ্য। কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতিতে শতাধিক রুট বাতিল করেও মাসে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি ক্ষতির দায় ঘাড়ে চাপছে বলে দাবি করছে রাজ্য পরিবহণ নিগম-সহ আরও দুই সরকারি পরিবহণ সংস্থা। সম্প্রতি রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক রিপোর্টেই উঠে এসেছে এই তথ্য। অভিযোগ, ক্ষতির পরিমাণ ছাপিয়ে গিয়েছে প্রাক্-অতিমারি পরিস্থিতিকে।
কোভিড-পূর্ব পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডিজ়েলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৬৭ টাকার কিছু বেশি। এখন তা একশোর কাছাকাছি। শুধুমাত্র তেল কেনার খাতেই প্রায় ৪৯ শতাংশ বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির। তুলনায় ভাড়া না বাড়ায় ধুঁকছে পরিষেবা। বাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিকল্পনা খাতে যে টাকা পাওয়া যায়, তা-ও দীর্ঘকাল বকেয়া। সব মিলিয়ে বাস রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে পরিবহণ দফতরের। কর্মী এবং আধিকারিকদের আক্ষেপ, গুরুত্বপূর্ণ যে রুটগুলিতে পর্যাপ্ত যাত্রী মেলে, সেই সব রুটে কড়া নজরদারির মধ্যে বাস চালিয়েও ক্ষতির বহর সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।
অতিমারি পর্বের আগে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি) ১৪০টি রুটে বাস চালাত। কমতে কমতে এখন সেই সংখ্যা ৯১-এ এসে ঠেকেছে। পুরনো ৮৭টি রুটের সঙ্গে চারটি নতুন রুটেও পরিষেবা শুরু করেছে তারা। অন্য দিকে, কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) ১৪৫টি রুটে বাস চালাত। এখন পুরনো ৮০টি রুট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে তারা। বাস চলছে আরও নতুন ১২টি রুটে। রাজ্য পরিবহণ নিগম পুরনো ৩৩টি রুট বাতিল করে তার বদলে আটটি নতুন রুটে বাস চালাচ্ছে। শহরে তিন সরকারি নিগম মিলিয়ে ৩২৯টি রুট থেকে কমে এখন বাস চলছে ২১২টি রুটে। ফলে, দৈনিক প্রায় ৬০০ বাস কম নামছে রাস্তায়।
কোভিডকালে পরিযায়ী শ্রমিক, স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ পরিষেবা দেওয়া ছাড়া ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে গিয়ে প্রভূত ক্ষতির মুখে পড়েছিল সরকারি পরিবহণ নিগমগুলি। অভিযোগ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে যাত্রী বাড়লেও ডিজ়েলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দৈনিক খরচ বৃদ্ধির ধাক্কা পুষিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। হাতে গোনা বৈদ্যুতিক বাস থেকে কিছুটা বাড়তি আয় হতে শুরু করলেও তা যথেষ্ট নয়। এই প্রসঙ্গে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আশা করা যাচ্ছে, সিএনজি এবং ব্যাটারিচালিত বাসের সংখ্যা বাড়লে জ্বালানি খাতে খরচ কিছুটা কমবে।’’
সম্প্রতি নিজেদের ৩০০টি ডিজ়েলচালিত বাসকেসিএনজি-তে বদলের বরাত দিয়েছে পরিবহণ নিগম। ওই বাস রাস্তায় নামলে জ্বালানি খাতে খরচ কিছুটা কমতে পারে। যদিও পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরাই মনে করছেন,পর্যাপ্ত সংখ্যায় ব্যাটারিচালিত বাস আসা পর্যন্ত পুরনো রুটে পরিষেবা চালু রাখা কিংবা আর্থিক ক্ষতির ভার লাঘব করা— দু’টির কোনওটিই সম্ভব হবে না।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।