Cinema Hall

সংস্কৃতির রাজধানীতে ‘মরণকূপ’ প্রেক্ষাগৃহ

সুশ্রী সিনেমা হলের পয়লা বৈশাখের ঐতিহ্য স্মরণে এ বারের অনুষ্ঠানে বাংলার প্রায় সব নামজাদা সঙ্গীতশিল্পীই ছিলেন। একটু বাদেই প্রেক্ষাগৃহ তপ্ত চুল্লির মতো হয়ে উঠল।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:০৮
Share:

হতশ্রী: বিবর্ণ চেহারায় বসুশ্রী। ঠিক মতো কাজ করে না এসি-ও। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

দৃশ্য ১: চৈত্র শেষে গ্রুপ থিয়েটারের ৭৫ বছর উপলক্ষে নাট্যোৎসব উদ্বোধনে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের মঞ্চ আলো করে বসে ছিলেন বাঙালির নাট্যজগতের প্রবীণ ও নবীন দিকপালেরা। নাটকের শো শেষ হলে দেখা গেল, ফুলের সমারোহে গুণিজন বরণের মেজাজটাই তেতো। দর্শককুল ঘেমেনেয়ে বিধ্বস্ত। এক মহিলা হল থেকে বেরিয়েই মাথা ঘুরে পড়লেন। ঘাড়ে, মাথায় জল দিয়ে তাঁর পরিচর্যার ফাঁকেই দমবন্ধ ক্ষোভ উগরে দিতে তখন ব্যস্ত নাট্যকর্মীরা। “এরা কি আবার গায়ক কেকে-র মতো কারও পরিণতি হোক চাইছে?” প্রেক্ষাগৃহে সে দিন ৬০-৭০ শতাংশ লোক ছিল। তাতেই নাটকের মাঝপথে এসি কার্যত তলানিতে। শোনা যাচ্ছে, অ্যাকাডেমির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র প্রায়ই এমন খেল দেখাচ্ছে। অভিনেতা, কলাকুশলী, দর্শক, সবারই তাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত।

Advertisement

দৃশ্য ২: বসুশ্রী সিনেমা হলের পয়লা বৈশাখের ঐতিহ্য স্মরণে এ বারের অনুষ্ঠানে বাংলার প্রায় সব নামজাদা সঙ্গীতশিল্পীই ছিলেন। একটু বাদেই প্রেক্ষাগৃহ তপ্ত চুল্লির মতো হয়ে উঠল। এত টাকার টিকিট কেটে গানবাজনা শুনতে এসে কি বেঘোরে প্রাণ দেব? গজরাতে গজরাতে হল ছাড়লেন অনেকেই। বসুশ্রীর অন্যতম কর্তা সৌরভ বসু ঘটনাটি অস্বীকার করছেন না। তাঁর কথায়, “হলে এসি-র সমস্যা অনেক দিনের। বার বার ডিরেক্টরদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করি, এ বার তাঁরা পদক্ষেপ করবেন।”

Advertisement

দৃশ্য ৩: কলকাতার উপান্তে সোদপুরের লোকসংস্কৃতি ভবনে গত শনিবার আর একটু হলেই মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটত। একটি আমন্ত্রিত শোয়ে বাচিকশিল্পী সুমন্ত্র সেনগুপ্তের পরিচালনায় দৃশ্যশ্রাব্য উপস্থাপনা মহাবৈদুর্যের মঞ্চায়নের তখন তোড়জোড় চলছে। হঠাৎ একটি লোহার বিম উপর থেকে খসে পড়ে। এক চুলের জন্য বেঁচে যান এক কলাকুশলী। কী হতে পারত, ভেবে শিউরে উঠছিলেন শিল্পী, কলাকুশলীরা। হলটির চেয়ারে গদি নেই, দেওয়ালে শব্দপ্রক্ষেপণের ‘প্যাডিং’ নেই, ছেলেদের সাজঘরে এসি নেই। সেট তোলার নানা অব্যবস্থা। অতীতে এক বার আগুন লাগার ফলে মঞ্চটি পর্যন্ত অসমান। ওই হলেই কলকাতার বড় নাট্যদলেরও অভিনয় হয়। সব অব্যবস্থা ছাপিয়ে সম্ভাব্য বিপদের কথা ভেবেই সে দিন হতভম্ব হয়ে যান শিল্পীরা।

সংস্কৃতির ‘রাজধানী’তে দেশের গর্ব প্রেক্ষাগৃহের উদ্বোধনও হচ্ছে এ কালেই। সরকারি-বেসরকারি, ছোট-বড় কিছু প্রেক্ষাগৃহ এখনও রয়েছে, যেখানে অভিনয়, গানবাজনা উপভোগ করা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা! এতগুলি নানা মাপের হলও দেশের অন্য শহরে নেই। আবার হল সাজানোর হিড়িকে কামারহাটির নজরুল মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন নজরুলের নামে বসেছে। তাতে হাসাহাসি হলেও স্থানীয় প্রশাসন আমল দেয় না। কিন্তু কয়েকটি অতি বিশিষ্ট হলে ইদানীং যা ঘটছে, তাতে বাঙালির মুখ পুড়তে পারে যে কোনও দিনই। রাজ্য তথ্যসংস্কৃতি দফতরের এক কর্তার দাবি, “ঘুরেফিরে হলগুলি পরিদর্শন হয়। কলকাতা এবং উপকণ্ঠের কয়েকটি হল সংশ্লিষ্ট পুরসভা এবং কেএমডিএ-র দেখার কথা।”

তবে নজরদারিতে যে ফাঁক রয়েছে, তা অবশ্য দু’-তিনটি উদাহরণেই পরিষ্কার। কেএমডিএ-র তত্ত্বাবধানে থাকা নজরুল মঞ্চে কেকে-র অনুষ্ঠানে বাড়তি লোক ঢুকেই বিপত্তি ঘটেছিল। সেই অনুষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু চেয়ার এখনও সারাই হয়নি। সরকারি হল কমিটির সদস্য, নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের কথায়, “হল রক্ষণাবেক্ষণের কাজটা দফায় দফায় চলতে থাকে। ছোটখাটো সমস্যা হয়। মিটেও যায়। কিন্তু অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের বিষয়টা উদ্বেগজনক।”

ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত অ্যাকাডেমিতে এসি-র সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ বছর কয়েক দিন শো বন্ধ রেখে এসি মেরামতি হয়। কিন্তু, সমস্যা মেটেনি। তার উপরে কয়েক দিন আগে অ্যাকাডেমির বাড়িটির কার্নিস ভেঙে আতঙ্ক ছড়ায়। ট্রাস্টিদের চেয়ারম্যান প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “সমস্যা অর্থাভাব। নানা ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। অবস্থা একেবারে বেহাল বলা যায় না।” নাট্যজগতের পুরোধারা চান, অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সবাই বসে সমাধানসূত্র বেরোক। ঘটনাচক্রে, সেই চেষ্টা এখনও ফলপ্রসূ হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement